আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন আজ বৃহস্পতিবার। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও আজ শপথ নেবেন।
এবার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকারে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ৩৬ জন থাকছেন। এদের মধ্যে নতুন মুখ আছেন কয়েকজন। বাদ পড়েছেন বিদায়ী সরকারে আলোচিত কয়েক মুখ।
গত বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর তালিকা পড়ে শোনান। এই ৩৬ জনকে আজ বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এর আগে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ায় এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এদিকে বিদায়ী ১৫ মন্ত্রী ও ১৩ প্রতিমন্ত্রীর জায়গা হয়নি নতুন সরকারে। এর আগে একাদশ সংসদে প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৮ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ছিলেন মন্ত্রিসভায়। এর মধ্যে ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী।
এবার নতুন সরকারে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিদায়ী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিদায়ী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, বিদায়ী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, সাবেক মত্স্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, ময়মনসিংহের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম, বিদায়ী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিদায়ী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
এছাড়া ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, রাজবাড়ীর সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। আর টেকনোক্র্যাট (সংসদ সদস্য নন এমন) মন্ত্রী হিসেবে এবারও থাকছেন স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এই কোটায় নতুন মুখ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন।
অন্যদিকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বিদায়ী সরকারের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমদু চৌধুরী, সিমিন হোসেন রিমি, বিদ্যুত্ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মুহিবুর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, রুমানা আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী, আহসানুল ইসলাম টিটু। নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হবে আজ বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়ার কথা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতোমধ্যে জানিয়েছে। নতুন সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয় পাবেন, তা জানা যাবে দপ্তর বণ্টনের পর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপ-মন্ত্রী গত পাঁচ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাদের মধ্যে টেকনোক্র্যাট দুজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তারা হলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
এর আগে, গতকাল বুধবার নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমতি দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে নতুন এই মন্ত্রিসভায় কে কোন দায়িত্ব পাচ্ছেন তা এখনও পরিষ্কার নয়। এর আগে গতকাল সকালে সংসদে শপথ নেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। এরপরই সংসদের নেতা নির্বাচিত করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে। সংসদীয় উপনেতা নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। স্পিকার হিসেবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে আবারও নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই সাথে চিফ হুইপ হয়েছেন মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন। তিনি মন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবেন।
১৪ মন্ত্রী, ১২ প্রতিমন্ত্রীর জায়গা হয়নি মন্ত্রিসভায়: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর নতুন যে মন্ত্রিসভা ঘোষিত হয়েছে তাতে ১৪ জন পূর্ণ মন্ত্রী ১২ জন প্রতিমন্ত্রী ও দুজন উপমন্ত্রী বাদ পড়েছেন। রবিবারের সংসদ নির্বাচনে ভোটের তৃতীয় দিনের মাথায় গতকাল বুধবার রাতে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি জানান, এবার পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের জন্য ২৫ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১১ জনকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে বলা হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় তিনজন উপমন্ত্রী থাকলেও এবার কাউকে উপমন্ত্রী রাখা হয়নি।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পরও প্রধানমন্ত্রীর পর ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রীর শপথ হয়। এদের মধ্যে দুজন ছিলেন টেকনোক্র্যাট কোটায়। এবারের জাতীয় নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করেন তারা। ফলে বুধবার মন্ত্রী হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন যে ২৩ জন, তাদের মধ্যে কেবল ৯ জন নতুন সরকারে থাকছেন। বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে তিনজন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হয়েছেন তিনজন। এই ছয়জনের কেউ নেই নতুন মন্ত্রিসভায়। বাদ পড়ার তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি বাদ পড়েছেন প্রতিমন্ত্রীও। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়েও একই ঘটনা ঘটেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর পাশাপাশি বাদ পড়েছেন উপমন্ত্রী। বাদ পড়া মন্ত্রীদের সবাই গত ৭ জানুয়ারির ভোটে জিতে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
যেসব পূর্ণ মন্ত্রী বাদ: মন্ত্রিসভার নতুন তালিকা ঘেঁটে দেখা যায় গত পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না। বাদ পড়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বীর বাহাদুর উশৈ সিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদকেও নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।
প্রতিমন্ত্রী যারা বাদ: শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসাও থাকছেন না নতুন সরকারে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবার জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। ফলে তাদের বাদ পড়াটা অনেকটা অনুমেয় ছিল।
মনোনয়ন পেয়েও ভোটে হেরে যাওয়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. স্বপন ভট্টাচার্য্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীও ডাক পাননি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমও ডাক পাননি এবার।
নতুন মন্ত্রীদের জন্য প্রস্তুত নতুন ৪০ গাড়ি: নতুন মন্ত্রিসভার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের জন্য ৪০টি গাড়ি প্রস্তুত রেখেছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিবহন পুলের (সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর) মাধ্যমে গাড়িগুলো প্রস্তুত রেখেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে এ তথ্য।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ৪০টির মতো গাড়ি প্রস্তুত রাখতে বলেছে। আমরা প্রস্তুত রাখছি। ৪০ জন ড্রাইভার প্রস্তুত। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকিও করছেন। গাড়িগুলো পরিবহন পুলের দ্বিতীয় তলায় রাখা হয়েছে। গাড়িগুলোতে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ছাড়াও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মনোগ্রাম লাগানো। আজ বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে গাড়িগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বুঝে নেবে। এরপর সেগুলো নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাড়িতে তাদের আনতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। গাড়িগুলোতে তারা বঙ্গভবনে শপথ নেয়ার জন্য যাবেন।