শুরু হলো নতুন আরেকটি বছর। ‘নতুন’ শব্দটি আমাদের মনে জাগায় পুরনোকে পেছনে রেখে নতুন স্বপ্ন, আশা আর বিশ্বাসে বুক বেঁধে সামনে এগিয়ে যাবার প্রত্যয়। সামনে এগোনোর জন্য পেছনের দিনগুলোতে চোখ রাখা জরুরি। নতুন বছরের নতুন সূর্যকিরণ গায়ে মেখে পেছনে ফিরলে হয়তো দেখবো অনেক স্বপ্নই আমাদের অধরা থেকে গেছে, হয়তো স্পর্শ করা যায়নি অনেক মাইলফলক। কিন্তু তাতে কী! থাকুক কিছু অপূর্ণতা, কিছু অপ্রাপ্তি, কিছু বেদনার স্মৃতি। আমাদের পা এখন নতুন বছরে।
আমাদের চোখে যদি স্বপ্ন থাকে, তবে আর আমাদের দারিদ্র কি! দারিদ্র আর হতাশা তো স্বপ্নহীনদের! স্বপ্নই মানুষকে বেঁচে থাকতে বলে, অব্যাহতভাবে লেগে থাকতে বলে লক্ষ্যে না পৌঁছা অবধি। গতকাল যে মানুষটি আধাপেট খেলো, কাল সে ভরপেট খাবে; যে ছেলেটি পরীক্ষায় খারাপ করলো, সে এবার ভালো করবে, অথবা যে মানুষটি কর্মক্ষেত্রে অসফল হয়েছে সে এবছর ভালো কিছু করবেÑ এমন আশা আর স্বপ্নই তো মানুষকে ক্রমাগত বাঁচিয়ে রাখে। স্বপ্নহীন মানুষের কাছে বেঁচে থাকার কোনো অর্থ থাকে না। কাঁচা দুধের সরের মতো নতুন যে সূর্যকিরণ গায়ে মাখছি, তা আমাদের এগিয়ে নিক প্রত্যাশা ভরা নতুন ভবিষ্যতের দিকে। পুরনো বছরে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গুর যে নিয়ন্ত্রণহীন দৌরাত্ম্য আমরা দেখেছি তা যেমন হতাশার, তেমনি নতুন বছরে ডেঙ্গুসহ সব ধরনের রোগ-ব্যাধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলো থেকে যেন বেঁচে থাকতে পারিÑ সেজন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতার এবং আমাদের সবার সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। বিদায়ী বছরটিতে নতুন নতুন মেগা প্রকল্পের যে উদ্বোধন আমরা দেখেছি তারই ধারাবাহিকতায় নতুন বছরেও দেশ এগিয়ে যাবে উন্নয়নের পথে, এমন প্রত্যাশা করাই যায়। যদিও নতুন ২০২৪ খ্রিস্টীয় বছরটি শুরুই হচ্ছে নানান অনিশ্চয়তা আর অস্থিরতা মাথায় নিয়ে। এর মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতাই প্রধান। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা গেলে বিগত দুই-দুইটি নির্বাচনে দেশের গণতন্ত্রের যে ভঙ্গুর চেহারা হয়েছে তা থেকে উত্তোরণ ঘটতো- নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবু নতুন বছরটিতে আমাদের দেশের জাতীয় রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে এবং অর্থনৈতিক খাতগুলো শঙ্কাহীনভাবে সক্রিয় থাকবে, এমন আশা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো।
আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এমন অনেক কিছুই আছে যা আমরা বিগত দিনে অর্জন করতে পারিনি। তবু আমাদের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। আমাদের প্রায় আঠারো কোটি মানুষের ছত্রিশ কোটি হাত যদি কর্মীর হাত হয়ে ওঠে তবেই আমরা দারিদ্র, নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতিসহ সব ধরনের সঙ্কটই মোকাবিলা করতে পারবো। আমাদের রয়েছে প্রবাসী শ্রমশক্তি, আছে তৈরি পোশাকশিল্পের বৃহৎ আন্তর্জাতিক বাজার। নতুন বছরে সমস্ত খাতেই বাংলাদেশ আরও ভালো করবে এবং সকল ষড়যন্ত্র আর পিছুটান মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবে- এমনটাই আশা আমাদের।
আমরা যে রোমান নববর্ষ উদযাপন করি তার প্রথম মাসটির নাম হলো জানুয়ারি। আর এটি হয়েছিল রোমান দেবতা জানুসের নামে। জানুস ছিলেন নবসূচনার দেবতা। তার মুখ ছিল দুটি; একটি অতীতের দিকে আরেকটি ভবিষ্যতের দিকে। অতীত দিনের পর্যালোচনা-আত্মসমালোচনার পর আমরা যেন নতুন ভবিষ্যতের দিকে নবউদ্যমে এগিয়ে যেতে পারিÑ দেবতা জানুস ছিলেন তারই প্রতীক। অতীতের দিকে তাকালে আমরা হয়তো অনেক অপ্রাপ্তি দেখতে পাই, কিন্তু তারই ভেতর কিছু সাফল্য তো ছিলো ঈর্ষনীয়।
প্রিয় পাঠক, নতুন বছরটিতে আপনার সব আনন্দ-বেদনার সঙ্গী থাকবে দৈনিক মানবকণ্ঠও। মুছে যাক পুরনো দিনের সকল গ্লানি ও অপ্রাপ্তির বেদনা। আজকের শীত-সকালের মিঠে-কড়া রোদের মতোই নতুন বছেরে সাফল্যে ভাসুক সবার আঙিনা। সবার পথ ভরে উঠুক কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে। এই প্রত্যাশায় স্বাগত জানাই খ্রিস্টীয় নতুন বছরকে। স্বাগত ২০২৪!