‘মাকে বাবা অনেক কষ্ট দিয়ে মেরেছে’

‘আমার বাবা অন্য বাসার এক কাজের মহিলাকে বিয়ে করে। মায়ের গলায় দড়ি দিয়ে বাবা তাকে মেরে ফেলে। এরপর ফ্যানে ঝোলায়। মাকে খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে। আপনার কাছে দড়ি আছে না? দড়ি দিয়ে আমার বাবাকে চেয়ারের সঙ্গে বাঁধবেন। তারপর মারতে মারতে মেরে ফেলবেন। কবর দেবেন না; জেলখানায় ফেলে রাখবেন।’
মা শাম্মী হত্যার ঘটনায় বাবার বিরুদ্ধে এভাবেই মর্মস্পর্শী কথাগুলো বলছিলেন পাঁচ বছরের শিশু আরিয়ান। শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামে তার নানার বাড়িতে কথা হয় মাহারা এ শিশুটির সঙ্গে। এ সময় ছোট ছোট বাক্যে বাবার নিষ্ঠুর নির্যাতনে মা মারা যাওয়ার কাহিনী বলে সে।

পরে জানা যায়, সে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় এভাবেই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিল। ৮ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নুর নবীর কাছে এ জবানবন্দি দেয়া হয়। তবে ওই সময় তার এ বক্তব্য সাংবাদিকরা জানতে পারেনি।

৭ জুন রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরে ভাড়া বাসায় একটি বায়িং হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন টিটু তার স্ত্রী শামিমা লাইলা আরজুমান্না খান শাম্মীকে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করে। পরে চিকিৎসার নামে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর ছোট ভাই মো. ফরহাদ হোসেন খান বাবু বাদী হয়ে ৮ জুন মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ ঘাতক স্বামী আলমগীর ও তার তৃতীয় স্ত্রী ইসরাত জাহান মুক্তাকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ উঠেছে, আলোচিত এ মামলার তদন্ত নিয়ে গড়িমসি করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মো. নওশের আলী।

মামলার বাদী মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ঢাকায় অবস্থানরত আসামির ধনাঢ্য ভগ্নিপতি মো. আবদুল বাছেদ অর্থের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পরিবর্তন এবং মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহে কাজ করছেন। আর তাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নওশের আলী প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ঘাতক আসামির পক্ষে ভূমিকা রাখছেন।
তিনি জানান, এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই শিশু আরিয়ান ও তার ছোট ভাই দেড় বছরের অ্যারনের জীবন বাঁচাতে তাদের ঢাকা থেকে নানার বাড়ি ময়মনসিংহে নিয়ে যান।

বাদী মো. ফরহাদের অভিযোগ, তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অনেক চাপাচাপি করার পরও তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী শিশু আরিয়ান ও গাড়ির ড্রাইভারকে সাক্ষী হিসেবে থানা কিংবা আদালতে জবানবন্দি নিতে অনীহা প্রকাশ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে আদালতে আবেদন করলে ৮ আগস্ট আরিয়ানের জবানবন্দি নেয়া হয়।
পরে আদালত ঘটনার পরোক্ষ সাক্ষী ড্রাইভার মো. কামাল হোসেনেরও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার আদেশ দেন। কিন্তু সাক্ষী হিসেবে ড্রাইভারের জবানবন্দি নেয়ার প্রয়োজন নেই বলে বাদী পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী খন্দকার মহিবুল হাসান আপেল ও মো. লুৎফর রহমান খানকে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।

আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, ১৬৪ ধারায় আদালতে শিশুর জবানবন্দি দেয়ার পর নিয়মানুযায়ী ঘাতক বাবাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন থাকলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা তা এড়িয়ে যান। এছাড়া নিহতের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট কিংবা মামলার চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে রহস্যজনক কারণে বাদীকে অন্ধকারে রাখছেন তদন্ত কর্মকর্তা নওশের আলী।

মামলার বাদী মো. ফরহাদ জানান, এসব কারণে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় তিনি মামলাটি র‌্যাব কিংবা পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া তার আশঙ্কা, মামলার আসামি ভগ্নিপতি মো. আলমগীর হোসেন টিটু জামিনে মুক্তি পেয়ে ঘটনার সাক্ষী শিশুপুত্র আরিয়ানকে গুম করতে পারেন।

তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নওশের আলীর সঙ্গে শুক্রবার বিকালে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বাদী পক্ষের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে এ সময় প্রশ্ন করা হলে তিনি হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ সাক্ষী শিশু আরিয়ান ও ড্রাইভার মো. কামালের জবানবন্দি নিয়ে টালবাহানার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, ০৫  নভেম্বর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস পি

Scroll to Top