ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অনবরত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রায় তিন মাস ধরে চালানো এ হামলায় নিহত হয়েছেন ২১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলায় ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট।
আর এবার গাজা-মিসর সীমান্তের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নিতে চায় ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই ঘোষণা দিয়েছেন। গাজার ‘অসামরিকীকরণ’ নিশ্চিত করতেই এমন পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন তিনি।
আজ রোববার (৩১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী মধ্য ও দক্ষিণ গাজার গভীরে প্রবেশ করে লড়াই চালাচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শনিবার বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই মিসর-গাজা উপত্যকার সীমান্ত করিডোরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে যাতে ওই অঞ্চলের ‘অসামরিকীকরণ’ নিশ্চিত করা যায়।
এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় নেতানিয়াহু বলেন: ‘ফিলাডেলফি করিডোর – বা আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে, (গাজার) দক্ষিণের ক্লোজিং পয়েন্ট – অবশ্যই আমাদের হাতে থাকতে হবে। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এটি স্পষ্ট, অন্য কোনও ব্যবস্থা নিলে সেটি আমরা যে নিরস্ত্রীকরণ চাই তা নিশ্চিত করবে না।’
রয়টার্স বলছে, নেতানিয়াহু এর চেয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। তবে যদি এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে তা ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনাদের প্রত্যাহারের পর প্রথম কোনও বাস্তবিক পরিবর্তন হবে।
গাজার এই বাফার জোন সম্পর্কে নেতানিয়াহুর মন্তব্য এমন সময় এসেছে যখন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ভূখণ্ডটিতে আক্রমণ আরও জোরদার করেছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বরাবরের মতো পুনর্ব্যক্ত করেছেন, চলমান এই ‘যুদ্ধ আরও অনেক মাস ধরে’ চলবে।
গাজার বাসিন্দাদের মতে, আল-বুরেজ, নুসেইরাত, মাগাজি এবং খান ইউনিসে তীব্র যুদ্ধ চলছে এবং লাগাতার বিমান হামলার মধ্যে আহত ফিলিস্তিনিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় বোমা হামলায় ১৬৫ জন নিহত এবং ২৫০ জন আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে চলমান ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ৬৭২ জনে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
এছাড়া ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরও ৫৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। একইসঙ্গে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়ে আরও হাজারও মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল বলেছে, গাজায় চলমান যুদ্ধে তাদের ১৭২ জন সেনা নিহত হয়েছে।