সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা দিন দিন ভালোর দিকে যাচ্ছে। দুই-একদিনের মধ্যেই তার কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র খুলে দেয়া হবে।
মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক এবং নিওরোলজিস্ট প্রফেসর ডা. আবু নাসার রিজভী।
সিঙ্গাপুরে স্থানীয় সময় বুধবার (৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় দ্বিতীয়বারের মতো ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা ব্রিফ করেন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. ফিলিপ কোহ। এ সময় বোর্ডের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে সাড়ে ১২টার সময় সিঙ্গাপুরের মেডিকেল টিমের সঙ্গে বসেছিলাম, উই হ্যাব এ ভেরি গুড ডিসকাশন।’
প্রফেসর ডা. আবু নাসের বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা দিন দিন ভালোর দিকে যাচ্ছে। উনার কিডনি স্থিতিশীল আছে। উনার ইনফেকশনের মাত্রাটাও অনেক কমে গেছে।ব্লাড কাউন্ট ও ইউরিন আউটপুটও ভালো রয়েছে। হার্টের কন্ডিশন, প্রেসার ও হার্টবিট ভালো আছে।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা চিন্তা করছেন, আগামী দুই একদিনের মধ্যে উনার শরীরে যে আর্টিফিশিয়াল মিনস ও ডিভাইস আছে তা খুলে ফেলা হবে। আগামীকাল কিছু ডিভাইস খোলা হবে। আর এভাবে যদি শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে থাকে তা হলে শুক্রবার বাকি ডিভাইসগুলো খুলে ফেলা হবে।’
এসময় তিনি জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় ডা. ফিলিপ আবার ব্রিফ করবেন।
ব্রিফিংয়ের সময় ওবায়দুল কাদেরের সহধর্মিনী বেগম ইসরাতুন্নেসা কাদের, সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন হাজারী এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সিলর একেএম আজম ও আতাউর রহমান, ওয়েলফেয়ার অফিসার মো. আল আমিন হোসেন, ডিবিসি নিউজ চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আহসান, অগ্রণী এক্সচেঞ্জ এর সিইও মো. শরিফুল ইসলামসহ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত রবিবার ভোরে হঠাৎ শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। এরপর তাকে বিএসএমএমইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। এনজিওগ্রাম করার পর তাঁর হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে।
বিএসএমএমইউ এর কার্ডিওলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান তাকে তত্ত্বাবধান করেন। এসময় তার চিকিৎসায় ১৯ সদস্যের মেডিক্যাল দল গঠন করা হয় এবং তাকে একটি রিং পরানো হয়।
রবিবার রাতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকসহ একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসা হয়। তবে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় সে রাতে তাকে পাঠানো হয়নি। পরে সোমবার ( ৪ মার্চ) দুপুরে ঢাকায় এসে দেবী শেঠি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে যান।
সেখানে গিয়ে তিনি ওবায়দুল কাদেরকে দেখেন এবং সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এরপর তিনি সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো ও উন্নত চিকিৎসার জন্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এরপর সোমবার বিকেল সোয়া ৪টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজোবেথ হাসপাতালের একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদেরক নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
বাংলাদেশ সময় রাত ৭টা ৫০ এ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুরে পৌঁছায়। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ওবায়দুল কাদেরকে মাউন্ট এলিজোবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।