স্থিতাবস্থা, সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র পদে আপাতত বহাল তাজকিন

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকিন আহমেদের পদটি শূন্য ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গেজেটের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতে চেয়ে প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসানের করা আবেদনে শুনানির পর আজ রবিবার এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। এ আদেশের ফলে তাজকীন আহমেদই আপাতত সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করবেন।

তাজকীন আহমেদ চিশতি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌর বিএনপির সদস্যসচিব।

তাজকীন আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নাশকতা ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে গত বছরের ডিসেম্বরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাব পাঠান ১২ জন কাউন্সির।

সে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর গত ২৩ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর–১ শাখার উপসচিব আব্দুর রহমান এক প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

প্রজ্ঞাপনে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। ওইদিন আরও একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

এ প্রজ্ঞাপনে নতুন মেয়রের কার্যভার গ্রহণ করা পর্যন্ত পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কাজী ফিরোজ হাসানকে প্রশাসনিক, আর্থিক ক্ষমতাসহ মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ ছাড়া একই দিন চিঠি দিয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের শূন্য পদে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে অনুরোধ করা হয় স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে। পরে দুই প্রজ্ঞাপন ও চিঠি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তাজকীন আহমেদ চিশতী। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট গত ১১ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন ও চিঠির কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি রুল দেন।

সাতক্ষীরা পৌসভার মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা ও প্যানেল মেয়রকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার অনুরোধ জানিয়ে দেওয়া চিঠি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিব, সাতক্ষীরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ কাজী ফিরোজ হাসান, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পরে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান। গত ১৩ ডিসেম্বর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশে হস্তক্ষেপ না করে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। সে ধারাবাহিকতায় রবিবার আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানিতে ওঠে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, তিনি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। তাজকীন আহমেদ চিশতীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।

আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। আগামী ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভটু আপিল করতে বলা হয়েছে আবেদনকারীকে।’

এ আদেশের ফলে তাজকীন আহমেদই আপাতত সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানান আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

তাজকিন আহমেদ পরপর দুইবার মেয়র নির্বাচিত হন। প্রথম মেয়াদে দুটি নাশকতা মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করার পর ২০১৬ সালের ৪ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক চিঠিতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭০১ টাকা পানির বিল মওকুফ, হাটবাজার ইজারা বাবদ ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৭০ টাকা বকেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালের ১৫ জুন তাঁকে আবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এ ছাড়া নাশকতার মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে আরেকবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রতিবারই আদালতের নির্দেশে তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

 

 

Scroll to Top