‘ফখরুল সাহেব, সংঘাতের উস্কানি দিয়ে সমঝোতা হয় না’

সংঘাতের বদলে সমঝোতা চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আহ্বানের জবাবে আওয়ামী লীগৈর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংঘাতের উস্কানি দিয়ে, সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি হয় না। তিনি বলেন, ‘ফেনীর সাজানো হামলার ঘটনা সংঘাতের উস্কানি। সংঘাতের উস্কানি দিয়ে সমঝোতা হবে না।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি আয়োজিত ‘নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের ১১ দফা জনগণের প্রস্তাব’ শীর্ষক সেমিনারে ওবায়দুল কাদের কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব, আপনাদের মুখের সংলাপের কথা ও মনের কথার সাথে যোজন যোজন দূরুত্ব। আপনারা যখন সমঝোতার কথা বলেন, তখন আমাদের ভাবতে হয় এটা কি আপনাদের মনের কথা, নাকি মুখের কথা?’।

‘গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে একটা কাজের সমঝোতা আমরা চেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী গণভবনে বেগম জিয়াকে ডেকেছিলেন। এরপরও আপনার ছেলের মৃত্যুর পর (খালেদা জিয়া ছেলে আরাফাত রহমান কোকো) মৃত্যুর পর তাঁকে সমবেদনা জানতে আপনার বাড়িতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন আপনারা যে আচরণ করেছেন,  যারা করে তারাতো সমঝোতায় বিশ্বাস করে না। এ দরজা কি করে খুলব তা আপনারা ভাবুন।’

গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) কক্সবাজার যাওয়ার পথে ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার আসল খবর বের হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন কাদের।

ওই ঘটনার জন্য বিএনপি ক্ষমতাসীন দলকে দায়ী করলেও আওয়ামী লীগ একে বিএনপির সাজানো ঘটনা বলছে। এই হামলার পরিকল্পনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুই ব্যক্তির মধ্যে টেলিফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এতে একজন ফেনীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা একজনকে (মোবারক) হামলার নির্দেশ  দিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া বা বিএনপির কোনো নেতার গাড়িতে যেন হামলা না হয়। মোবারক তাকে নিশ্চিত করে বলেন, কেবল সাংবাদিকদের গাড়িতে হামলা হবে।

এই দুই জনের কথোপকথনে আরও জানা যায়, এই ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে টাকার বিনিময়ে আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দাবি, এই নির্দেশদাতা চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন। তবে শাহাদাৎ দাবি করেছেন, তার কণ্ঠস্বর নকল করা হয়েছে।

এই টেলিফোনালাপের কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘থলের বিড়াল অবশেষে মিউ ডেকেছে।‘

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ফেরার পথে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর ফেনীর মহিপাল পার হওয়ার পর দুটি বাসে ককটেল হামলা চালান হয়। এতে বাস দুটিতে আগুন ধরে যায়। এ বিষয়ে কাদের বলেন, ‘গাড়ি পোড়ানো তো বিএনপির পুরানো অভ্যাস, এটা আওয়ামী লীগের ট্র্যাক রেকর্ডে নেই। পরিকল্পিতভাবে রংসাইডে বাস রাখা হয়েছিল এবং পরিকল্পিতভাবে হামলার নাটক করেছে। তা পুলিশের রিপোর্টেই এসেছে।’

এ ঘটনায় দুই একটি পত্রিকার রিপোর্টের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘এসব পত্রিকা আমাদের বিরুদ্ধে নেমেছে। তাঁরা বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে আদাজল খেয়ে নেমেছে ‘

‘ঠিক আছে তারা তা করতেই পারে। তারা কোন দলকে সমর্থন করতেই পারে। কিন্তু রাতকে দিন, দিনকে রাত কিংবা তিলকে তাল বানানো বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নয়। ফেনীর ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে আওয়ামী লীগের উপর দায় চাপানো হয়েছে।’

সিইসির ‘রাজনৈতিক’ বক্তব্যের সমালোচনা

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা-প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাম্প্রতিক এক উক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কোন দলীয় বক্তব্য দিয়ে রাজনীতির চর্চা করে নিজেদের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করুক তা আমরা চাই না। কিন্ত বিএনপি এমন একটা নির্বাচন কমিশন চায় যেন বিএনপি যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় আসতে পারে।’

জিয়াউর রহমানের ভূমিকা উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘জাতির পিতার হন্তারকদের পুরস্কৃত ও পুর্নবাসন করে তিনি বহুদলীয় প্রবর্তন করেন? শত শত সেনাবাহিনীর অফিসার জোয়ানদের হত্যা করে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেন? বাংলাদেশের উচ্চ আদালত যাকে বলেছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুর্নঃপ্রবর্তক? এমনকি প্রধান বিচারপতির এসকে সিনহা ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের যে পযবেক্ষণ দিয়েছেন সেখানেও তাকে (জিয়াউর রহমান) অবৈধ ক্ষমতা দখলদার বলেছেন। এমন হাস্যকর দাবিতো বিএনপি করেছে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। নির্বাচনের মাধ্যমে তারা যে জনপ্রিয়তার করতে চাচ্ছেন তা যাচাই করুক।’

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক  হাছান মাহমুদ, অবসারপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, নিরপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) একে মোহাম্মদ আলী শিকদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ, বিম্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।  অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রিয়াজুল কবীর কাওছার প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, ০২ নভেম্বর ২০১৭ 
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ

Scroll to Top