তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের বেতন বাড়ালেও শিল্পের ওপর খুব বেশি চাপ পড়বে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. এমএ রাজ্জাক।
আজ রোববার ‘নিউ ডাইমেনশন অব ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ সেমিনারে তিনি একথা বলেন। এর আয়োজন করে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)।
রাজধানীর বনানীতে সংস্থাটির কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ম্যাক্রো ইকোনমিক অ্যান্ড ট্রেড ইস্যুজ নামের একটি পেপার উপস্থাপন করেন তিনি।
প্রশিক্ষণ সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন, পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী ছাত্তার। এছাড়া ডিজিটাল ব্যাংক : অপরচুনেটিশ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ শীর্ষক পেপার উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এবং বাংলাদেশ ফাস্ট ফাইন্যান্সিয়াল সোশ্যাল অ্যাকাউন্টিং ম্যাট্রিকস-২০২১ তুলে ধরেন পিআরআইর ড. বজলুল হক খন্দকার।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শ্রমিকের মজুরি বাড়লে উৎপাদন খরচও বাড়বে। এতে পোশাক খাতে কিছুটা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হবে। কিন্তু শুধু মজুরি বাড়ালেই পোশাক খাতে অর্ডার কমবে বিষয়টি এমন নয়। কেননা মজুরি বাড়ালে বায়াররাও হয়তো পোশাকের দাম বাড়িয়ে দেবে। কেননা তারও তো হিসাব করবে আগে একটি পোশাকের উৎপাদন খরচ কত ছিল আর এখন কত হয়েছে। মজুরি বাড়ানোর পরও বাংলাদেশ থেকে যে কম দামে বায়াররা পোশাক কিনতে পারে অন্য দেশ থেকে এত কম দামে পোশাক কিনতে পারবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকা শ্রমিক অধিকারের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে দ্রুতই নিতে পারবে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় লাগে। তবে সাধারণত আমেরিকা কোনো সিদ্ধান্ত নিলে পশ্চিমের অন্যান্য দেশগুলোও তা সমর্থন দেয়। এ ক্ষেত্রে উদ্বেগের বিষয় আছে। পাশাপাশি এলডিসি উত্তরণের পর জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতেও সমস্যা হতে পারে।
ড. জাইদী সাত্তার বলেন, গত দেড় বছরে বাংলাদেশে টাকার মান কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এতে রপ্তানিকারকরা সাময়িকভাবে বোনাসের মতো লাভবান হলেও আমদানি খরচ অনেক বেড়েছে। ফলে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেরও আয় বেড়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব বোর্ড কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুল্ক ও ট্যারিফ কমিয়ে দিতে পারত। তিনি আরও বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ আসে তা তুলে দেওয়া উচিত। কেননা আমাদের কি কি পণ্য আমদানি জরুরি সেটি যদি আমলারা বসে সিদ্ধান্ত নেন তাহলে সেটা ভালো কথা নয়।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু নীতিমালা ছাড়াই নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে দুটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়াটা পজিটিভ বিষয় নয়। কেননা নগদ ও কড়ি কে যে ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হলো তারা নিয়ন্ত্রিত হবে কিভাবে? কাজই বা করবে কিভাবে। নগদ কিছুটা শুরু করতে পারলেও একেবারেই নতুন হওয়ায় কড়ির জন্য এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। এক্ষেত্রে সরকারের ধূসর এরিয়া আছে। সেই সঙ্গে বিকাশ সবচেয়ে ভালো কাজ করলেও কেন বিকাশকে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি এ নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচনের পর ধীরস্থির ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দিলে ভালো হতো। তাড়াহুড়ো করার কোনো মানে ছিল না। সেই সঙ্গে নীতিমালা না করে দুটি ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়াটা ঘোড়ার আগে লাগাম দেওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, খেলার মধ্যে যদি নীতিমালা, রেফারি ও লাল কার্ডের কোনো সিস্টেমই না থাকে তাহলে তো যে যার মতো কনুই দিয়ে গুতো মেরে গোল করে দেবে।
ড. বজলুল হক খন্দকার ফাইন্যান্সিয়াল সোশ্যাল অ্যাকাউন্টিং নিয়ে তৈরি করা নতুন একটি ম্যাট্রিক্স তুলে ধরেন। এটি ব্যবহার করে কিভাবে উৎপাদন, চাহিদা, ভোগ এবং দেশজ আয় ইত্যাদি বিষয় হিসাব করা যায় তা তুলে ধরেন।