একটি পেঁয়াজের দাম এখন ৫ টাকা!

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম মানভেদে বেড়েছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। এক মাসে তা দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ। গেলো সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। ঢাকার বাজারে রোববার ও সোমবার তা আরো বেড়ে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ উঠেছে ৮৫-৯০ টাকায়। অবশ্য রাজধানীর ছোট বাজার বা মুদি দোকানে কোনো বিক্রেতা নতুন কেনা দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯০-১০০ টাকাও চাইছেন।তবে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা।

সিটি করপোরেশনের মূল্য তালিকায় পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৪২ লেখা থাকলেও বাজারে এ দর টিকছে না। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, এক মাসে বাজারে পেঁয়াজের দাম ৭১ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ২০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল।

সাধারণত একটি পরিবারে মাসে গড়পড়তা ৫ কেজি পেঁয়াজ লাগে। সে হিসেবে ১০০ টাকার পেঁয়াজেই একটি মাঝারি পরিবারের পুরো মাস চলে যেত। আর এখন ২০ টাকায় মিলছে এক হালি পেঁয়াজ।দেশি পেয়াজের চেয়ে ভারতীয় লাল পেঁয়াজের ওজন সাধারণত বেশি। দেশি পেঁয়াজ যেখানে কেজিতে ৪০-৫০টি বা তার বেশি হয়, সেখানে ভারতীয় পেঁয়াজ ১৪ থেকে ২০টি হয়।

রাজধানীর শনির আখড়া কাঁচা বাজারে কথা হয় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবু দিদারের সঙ্গে। তিনি জানান, পেঁয়াজের দর অস্বাভাবিক বেড়েছে। তার দোকানে এক কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ওজন দিয়ে দেখা যায় ১৪টি। সে হিসেবে একটি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম পড়ছে পাঁচ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে বাজারে পেঁয়াজের সংকট রয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম এশিয়ান এজ সূত্রে জানা যায়, যেখানে নাসিকে পাঁচ রুপি কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়, সেখানে দর উঠেছে ৪০ রুপি। অবশ্য আজকের খবরে তা চার থেকে ছয় রুপি কমে ৩২-৩৩ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।

তবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান অবশ্য শুধু আমদানি সঙ্কটকেই দায়ী করেন না।

বর্তমানে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক বাজার সৃষ্টিতে ব্যবসায়ীদের হাত থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি জানান, চালের বাজারে দাম বাড়ার পর পেঁয়াজের বাজারও এখন আগুন। দেশে প্রাকৃতিক সঙ্কটের কারণে আমদানি ঘাটতি থাকতে পারে। তার কারণে হয়তো একটু আধটু দাম বাড়বে। কিন্তু এতোটা মেনে নেয়া যায় না। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জিনিসের দাম বৃদ্ধি এখন জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, চালের বাজারে দাম বৃদ্ধির পর ব্যবসায়ীরা সাহস পেয়ে গেছেন। তারা মনে করছেন, নতুন কোনো পণ্যের দাম বাড়ালেও বাজার সয়ে যাবে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন করে কোনো সেল করা দরকার। তারা শুধু দর উঠানামার বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন।

ধানমন্ডির ঝিগাতলার বাজারে সোমবার পেঁয়াজ কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী ফাতেমা খান লুবনা। তিনি বলেন, পেঁয়াজের বাজার এখন আসলেই আগুন। কিন্তু না খেয়ে তো উপায় নেই। সাধারণত ডিম, কলা আমরা হালিতে কিনি। এখন দেখছি পেঁয়াজও হালিতে কিনতে হবে।

জাকির হোসাইন নামের আরেক ক্রেতা অবশ্য একটু রসিকতার ছলেই বলে ফেলেন, পেঁয়াজের ফ্লেভার কিনতে পাওয়া গেলে তাই কিনতাম। পেঁয়াজের বদলে ফ্লেভার দিয়েই রান্না করতাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, ৩০ অক্টোবর   ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস

Scroll to Top