ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, নগদ বিনিয়োগের জন্য সামিট করা হয়নি। মূলত বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য সামিট আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ যে পারে, আমাদের যে সক্ষমতা আছে, বিজনেস সামিটের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে এ বার্তাই দেয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (১৩ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআইয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বিজনেস সামিটের শেষ দিনের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘একটা সময় ছিল বিদেশিরা দেশে বিনিয়োগ করতে চাইতো; কিন্তু সক্ষমতা না থাকার কারণে তাদের আনা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা এখন সক্ষম। আমাদের সক্ষমতা জানান দিতে নানা দেশের প্রতিনিধি নিয়ে এ সামিটের আয়োজন করা হয়েছে।’
এরইমধ্যে সৌদি আরব বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ আগ্রহ দেখিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সামিটে আগত সৌদি আরবের মন্ত্রী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি বিজনেস কাউন্সিল গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে বলেও জানান জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, একটি জায়গা ভরাট করে সেখানে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা দেশি ব্যবসায়ীদের জন্যই কঠিন কাজ, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এটা এক রকমের অসম্ভব। এজন্য এতদিন বিনিয়োগ আনতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়েছে।
তবে এখন বাংলাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল আছে উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, অবকাঠামোগত সমস্যা না থাকায় এখন বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশভিত্তিক জায়গা বরাদ্দ দেয়া হবেও বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো বিনিয়োগে আরও আগ্রহী হবে।
বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “আমাদের এখানে বাংলাদেশি তৈরি পণ্যের বেশ কয়েকটি প্যাভিলিয়ন আছে। সেসব প্যাভিলিয়নে এত ভালো পণ্যের গায়ে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যান।”
তিনি আরও বলেন, একটা সময় ছিল মোটরসাইকেলের পুরোটাই বাংলাদেশ আমদানি করতো। তবে এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে মোটরসাইকেল। এমনকি কয়েকবছর পর মোটরসাইকেল রফতানির সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ।
এদিকে দেশে আদৌ বিনিয়োগ আসবে কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে নবম বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার হবে বাংলাদেশ। ১৭ কোটি মানুষের এ বাজার ধরতে নিজ থেকেই বিনিয়োগকারীরা আসবেন।
আর ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি উচ্চাভিলাষ কি-না জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন বলেন, এক সময় দেশের অর্থনীতি ছিল মাত্র ৯০ বিলিয়নের। সেটা এখন বেড়ে হয়েছে ৪৭০ বিলিয়ন। দেশের যে সক্ষমতা আছে তাতে করে হাজার বিলিয়নের অর্থনীতি হতে বেশি দিন সময় লাগবে না।
তরুণদের কর্মস্পৃহা ও উদ্যোমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই তরুণ। শুধু ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমেই এ দেশের তরুণরা ঘরে বসে ৫-৬ বিলিয়ন ডলার দেশের জন্য নিয়ে আসতে পারবেন।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা নিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা (এসএমই) একটি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। জার্মানি ও জাপানের মতো দেশের অর্থনীতির সিংহভাগ দাঁড়িয়ে আছে ক্ষুদ্র ব্যবসার ওপরে। সে তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থা কিছুটা পশ্চাদপদ।
দেশে বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছোট ব্যবসায়ীদের সংযোগে একটি বড় রকমের ঘাটতি আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এটা দূর করতে পারলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবে। পাশাপাশি সচল হবে দেশের অর্থনীতিও।
এদিকে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের পর্দা নেমেছে আজ। সমাপনী দিনে ৮টি সেশনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বক্তারা। সেশনগুলো হচ্ছে: সারকুলার ইকোনমিক, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, হাই-টেক অ্যান্ড অটোমোবাইল, স্পেশাল ইকোনমি জোন, এসএমই’স ডেভেলপমেন্ট, ফারমাসিউটিক্যালস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার।
এছাড়া দুপুর ২টায় ট্যুরিজম অ্যন্ড ব্লু ইকোনমি ও উইমেন্স পার্টনারশিপ বিষয়ক প্যারালাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সবচেয়ে বড় এ বিজনেস সামিটে বাংলাদেশের মূল খাতগুলোতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধাগুলো তুলে ধরা হয়। এতে দেশ-বিদেশের প্রতিনিধি, বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়েছেন।
সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজনেস সামিটের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। আর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ এর আয়োজন করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সম্মেলনের সহ অংশীদার হিসেবে সহযোগিতা করেছে।
সামিটে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সিইও ও ২০০ জনের বেশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বিশ্বের ১৭টি দেশের ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
তিনদিনের সামিটে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত নিয়ে ১৭টি সেমিনার ও তিনটি প্ল্যানারি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতা, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরা হয়।
এর আগে শনিবার (১১ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট- ২০২৩’ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সামিটের অন্যতম আকর্ষণ ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো’রও উদ্বোধন করেন তিনি।