গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ধরাশায়ী ইংল্যান্ড দল। চট্টগ্রামে টাইগারদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত বিশ্ব সেরারা। আজ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। টি২০ ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এটিই বাংলাদেশের প্রথম জয়।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) টসে জিতে ইংল্যান্ডকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। শুরুটা ইংল্যান্ডের পক্ষে গেলেও, শেষটা ছিল বাংলাদেশের। দলের তিন পেসার শেষ পাঁচ ওভারে রান দেন মাত্র ৩০। বাউন্ডারি হজম করে মাত্র দুটি। প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেটের বিনিময়ে ৮০ রান করা ইংল্যান্ড, শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে তুলতে পারে মাত্র ৭৬ রান। ফলে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫৭ রানের।
সেই রান তাড়া করতে নেমে দলকে ঝোড়ো শুরু এনে দেন ৮ বছর পর দলে ফেরা রনি তালুকদার। তার কল্যাণেই প্রথম ৩ ওভারে ৩২ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। তবে রনি ইনিংস বড় করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ২১ রানে তিনি ফেরেন আদিল রশিদের বলে বোল্ড হয়ে। পরের ওভারে আরেক ওপেনার লিটন দাসও ফিরে যান। তাকে ফেরান জফরা আর্চার। ওয়ানডে সিরিজটা বেশ বাজে কাটানো লিটনের ব্যাট থেকে আজ আসে ১২ রান।
দুই ওভারে ২ উইকেট হারালেও, ঘাবড়ে যায়নি বাংলাদেশ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত পাল্টা আক্রমণে ইংলিশ বোলারদের রেখেছেন চাপে। এর মধ্যে সপ্তম ওভারে মার্ক উডকে পরপর চার বলে চারটি চার হাঁকান শান্ত। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি। এরপরও তার ব্যাট ছিল চড়া। ফলে ২৭ বলেই টি২০ ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি পেয়ে যান শান্ত।
অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পরেই অবশ্য বিদায়ঘণ্টা বাজে শান্ত। মার্ক উডের ১৪৬ কিলোর গোলা ভেঙে দেয় তার স্টাম্প। ফেরার আগে ৩০ বলে ১৭০ স্ট্রাইকরেটে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া ৫১ রানের ইনিংসটি খেলেন তিনি। শান্ত আগে অবশ্য ফেরেন অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়ও। মঈন আলীর বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ওয়াইড লং-অনে দৌড়ে আসা স্যাম কারানের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ব্যক্তিগত ২৪ রানে তৌহিদ ফিরতেই তৃতীয় উইকেট জুটিতে শান্তর সঙ্গে তার গড়া ৬৫ রানের জুটি ভাঙে।
তৌহিদ-শান্তর বিদায়ের পর ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচ শেষ করে আসেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন। দুজনে পঞ্চম উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন থেকে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই মাঠ ছাড়েন। রানে-বলে তেমন ব্যবধান না থাকলেও সাকিব খেলেছেন তার মতোই, আক্রমণাত্মক। ২৪ বলে ৬ চারে ৩৪ রান করেন তিনি। আফিফের ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে ১৫ রান।
এর আগে, চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল দারুণ। পাওয়ারপ্লেতে দলটি হারায়নি কোনো উইকেট। প্রথম ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে তুলে ফেলে ৮০ রান। এরপর বাটলার-ডাকেটের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে সফরকারীরা হাঁটছিল বড় সংগ্রহের পথে। তবে ইনিংসের শেষ বেলায় দুরন্ত বোলিং করলেন বাংলাদেশের পেসাররা। তাতে ১৫৬ রানেই থামে ইংলিশদের রানের চাকা।
শেষ বেলায় বাংলাদেশ পেসাররা কতটা দুরন্ত ছিল, তা একটি পরিসংখ্যানই পরিষ্কার বলে দেয়। শেষ পাঁচ ওভারে মুস্তাফিজ-হাসান-তাসকিনদের বলে মাত্র দুটি বাউন্ডারি মারতে পেরেছে ইংলিশ ব্যাটাররা। এর মধ্যে ১৭তম ওভারে মাত্র ১ রান দেন হাসান মাহমুদ। ওই ওভারের প্রথম বলে তিনি তুলে নেন বিধ্বংসী হয়ে ওঠা ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারকে।
এর আগের ওভারের শেষ বলে আবার বেন ডাকেটকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটার ফিরতেই থমকে যায় ইংলিশদের রান তোলার গতি। শেষ ৫ ওভারে মাত্র ৩০ রান তুলতে পারে সফরকারীরা।
অথচ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডের শুরুতে পায় উড়ন্ত সূচনা। পাওয়ারপ্লেতে বিনা উইকেটে ৫১ রান তুলে ফেলে দলটি। বাংলাদেশ প্রথম ব্রেক থ্রু পায় ১০ম ওভারের শেষ বলে। নাসুম আহমেদকে বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো লিটন দাসের গ্লাভসবন্দী হন ফিলিপ সল্ট। ৩৫ বলে ৩৮ রান করে ফেরেন তিনি।
দুই ওভার পর দাবিদ মালানকে ফিরিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। ষষ্ঠ ওভারে সল্টের ক্যাচ ছাড়া সাকিব মালানকে বানান শান্তর ক্যাচ। ৪ রান করেই ফেরেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। অল্প সময়ের ব্যবধানে ২ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড এরপরই শুরু করে পাল্টা আক্রমণ। হাত খুলে খেলতে শুরু করেন বাটলার। তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন ডাকেট। ফলে ২০০ রানও খুব কঠিন কিছু মনে হচ্ছিল না সফরকারীদের জন্য।
তবে মুস্তাফিজ এবং হাসান পরপর দুই বলে ডাকেট (২০) এবং বাটলারকে (৬৭) ফেরাতেই পাল্টে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট। হাসান ১৯তম ওভারে ফেরান ধুঁকতে থাকা স্যাম কারানকে (৬)। শেষ ওভারে তাসকিন পান নিজের প্রথম উইকেট। প্রথম বলেই স্লোয়ারে বোল্ড করেন ক্রিস ওকসকে (১)। শেষ বলে আরও একটি উইকেট পেতে পারতেন তাসকিন। তবে মঈন আলীর নিশ্চিত ছক্কা বাঁচানোর পর নাজমুল হোসেন শান্তর বানিয়ে দেওয়া ক্যাচ হাতে রাখতে পারেননি রনি তালুকদার।
তাসকিনের শেষ বলে ২ রানের বেশি নিতে পারেনি ইংল্যান্ড। ফলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫৭ রান।