গোপালগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৫৮টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এসব ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বীর নিবাস নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। এ কমিটিতে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকেও রাখা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আশরাফুল হক জানান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১২টি, টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ১২টি,মুকসুদপুরে ১০টি, কোটালীপাড়ায় ১২টি ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ১২টি ‘বীর নিবাসের’ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। একতলা বিশিষ্ট বীর নিবাসের ভবনে ২টি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, ডাইনিং ও ড্রয়িং স্পেস এবং ১টি ওয়াশরুম রয়েছে। এখানে পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিটি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা। সেই হিসেবে ৫৮টি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
গোপালগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সারদেশে ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথমে ১৪ হাজার বীর নিবাস নির্মিত হয়েছে। এরমধ্যে গোপালগঞ্জে ৫৮টি ‘বীর নিবাস’ রয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। অচিরেই এগুলোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
কাশিয়ানী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিরান হোসেন মিয়া বলেন, প্রথম পর্যায়ে আমাদের উপজেলায় ১২টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বীর নিবাস নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। ২য় পর্যায়ে বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে এগুলোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, অস্বচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে বীর নিবাসের উদ্বোধন করবেন। পরে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ‘বীর নিবাস’ হস্তান্তর করবেন। এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ শেখ ফজলুল হক মণি অডিটোরিয়ামে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবু হোসেন বলেন, অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অনন্য সাধারণ উদ্যোগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ৭১ এ জীবন বাজি রেখে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত করেছি। দেশে স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি আমাদের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ক্ষতায় এসে আমাদের অবমূল্যায়ন করেছে। তাই অনেক মুক্তিযোদ্ধা স্বচ্ছল হতে পারেন নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেই মুক্তিযুদ্ধাদের সম্মানিত করেছেন। তিনি ভাতাসহ বিভিন্ন সুয়োগ সুবিধা দিচ্ছেন। এখন ‘বীর নিবাস’ করে দিয়েছেন। এতে আমাদের সম্মান আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। শেষ জীবনে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভালো বাড়িতে বসবাসের ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছেন। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই। তাঁর নেতত্বে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার এ দেশ পরিচালনা করবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌছে যাবে। বঙ্গবন্ধুর সেনারবাংলায় প্রতিটি মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করবে। এটিই আমার প্রত্যাশা।
সংবাদ সূত্রঃ বাসস