জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ভোক্তা আইনে পাকা রশিদ দেওয়ার বিধান থাকলেও অতি মুনাফার জন্য তা দেওয়া হয় না। কিন্তু আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই পণ্য বিক্রি করলে পাকা রশিদ দিতে হবে। ভাউচার ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না।
রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এফবিসিসিআই আয়োজিত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে মতিঝিলে এফবিসিসিআইর সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসার পরিবেশ দিয়ে থাকে। বাজারে অস্থিতিশীল হলে ব্যবসায়ীদের অসাধু তকমা দেওয়া হয়, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে পাকা রশিদ বা ভাউচার থাকা আবশ্যক। এটা করা হলে যে যার মতো পণ্য বিক্রি করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত অক্টোবরে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়ে মিটিং করেছেন। সেখানেও গ্যাসের সমস্যার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পর এখনো গ্যাসের সমস্যা বলা হচ্ছে, এটা ভুল ম্যাসেজ (বার্তা) হয়ে যাচ্ছে। নিত্য পণ্যের দাম নিয়ে দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ডেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে সমস্যা কোথায়? এলসি গ্যাসের দাম ২৬৬ টাকা বৃদ্ধি করার পরও নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না।
বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, গত রমজান মাসেও মার্কেট থেকে সয়াবিন তেল আউট হয়ে যায়। কিন্তু অভিযানে ঠিকই তা বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। দেশে যথেষ্ট পণ্য মজুদ রয়েছে। কাজেই লাভ করলে তা সিস্টেমে করতে হবে। বিভিন্ন বাজার কমিটি ঠিক মতো কাজ করলে ৮০ শতাংশ পণ্যের মূল্য ঠিক থাকবে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের অস্থিরতা সৃষ্টি হলে আমরা আমদানি, মজুদ নিয়ে বাজারে আমরা করি, সেগুলো করতে চাই না। ব্যবসায়ীরাই এগুলো সমাধান করতে পারে।
আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী, আড়তদার এবং মিলমালিকদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে কেউ যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন থাকতে হবে। রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআই’র পক্ষ থেকে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট বাজার মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে। কারণ, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব আছে।
এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সারাবিশ্বে যেখানে উৎসব এলে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমিয়ে দেন, সেখানে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন। উৎসবে পণ্যের দাম বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা কতটুকু অপরাধি ও অভিযুক্ত তা জানাতে হবে। কারণ দিন শেষে দোকানদাররাই দায়ী হচ্ছে। চিনির ৮৬ টাকা কেজির যে অবস্থা দাম বাড়িয়ে ১০৭ টাকা করার পরও একই অবস্থা, বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। যারাই বাজার খারাপ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সামনে রমজান কাজেই কোনোক্রমেই যাতে পণ্যের দাম না বাড়ে সে আহ্বান জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, মিল থেকেই বেশি দামে ১০৭ দরে চিনি বিক্রি করছে। তাহলে আমরা কী করব? মান সম্মানের কারণে চিনি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। ৪০ বছরের ব্যবসা জীবনে চিনি শূন্য বাজার দেখিনি। রমজানে মিল থেকে আমাদের চিনি দেওয়া না হলে চিনি নিয়ে টানাটানি আরও বাড়বে।
সভায় পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, মিল থেকে ঠিকমতো তেল দিলে আসন্ন রমজান মাসে বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো সংকট হবে না। মিল থেকে চিনি বিক্রি করায় আমরা ভাগে ১০ কেজি পাই না।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন জানান, সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, হাবীব উল্লাহ ডন, বাংলাদেশ অয়েল মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা, মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার এজিএম তসলিম শাহরিয়ার।