\’স্বপ্নহীন\’ সেই বালকটি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম

\’যদি লক্ষ্য থাকে অটুট বিশ্বাস হৃদয়ে হবেই হবে দেখা দেখা হবে বিজয়ে\’ এই গানটির সাথে সবাই পরিচিত। লক্ষ্য যদি সুনির্দিষ্ট থাকে সফলতা আসবেই। এই কথাটা সবাই বলে থাকেন। জীবনের সুনির্দিষ্ট কোনো স্বপ্ন ছাড়া সফলতা অর্জন মোটের ওপরে কঠিন। তবে এর ব্যতিক্রম সালাহউদ্দিন রিফাত। এক কথায় তাকে বলা যায় স্বপ্নহীন বালক। জীবনের সুনির্দিষ্ট কোনো স্বপ্ন ছিল না তার। তার পরও বিসিএস আবেদনে পুলিশ ক্যাডারকে প্রথম চয়েজ দিয়েছিলেন রিফাত। তবে কখনো ভাবেননি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হবেন। সর্বাত্মক পরিশ্রম, নিয়মানুবর্তিতা আর আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে এ বছর ৩৬তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন রিফাত।

২০০৬ সালে রিফাত ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি আর ২০০৮ সালে ভোলা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন এ মেধাবী শিক্ষাথী। ভোলা জেলায় জন্ম নেয়া সালাহ্‌উদ্দিন রিফাত ২০০৯-১০ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে ভর্তি হন। বিবিএ পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৬৩ ও এমবিএ পরীক্ষায় সিজিপিএ ৩.৭৫ পেয়ে আরেকবার মেধা তালিকায় নাম লেখান ঢাবির এ শিক্ষার্থী।

এমবিএ শেষ করেই রিফাত পল্লী বিদ্যুতে এজিএম পদে চাকরিতে যোগ দেন। বন্ধুদের বিসিএসে যোগ দিতে দেখে লোভনীয় এ চাকরি ছেড়ে প্রস্তুতি শুরু করেন বিসিএস পরীক্ষার। বিসিএস প্রস্তুতির মধ্যেই পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে চাকরিতে যোগ দেন। তার পরও বিসিএসের পড়া বন্ধ না করে বন্ধুদের নিয়ে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন।

রিফাত বলেন, আমি আসলে তেমন সর্বস্তরের মেধাবী ছাত্র ছিলাম না। আমার মা-বাবার দোয়া, উৎসাহ আর বন্ধুদের আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে এ শীর্ষ চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। তাছাড়া আমি ভাবতেই পারছি না যে, পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়েছি। এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সালাহ্‌উদ্দিন রিফাতের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও ছিল প্রবল আগ্রহ। রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। নির্বাচিত হয়েছেন বিভাগের আন্তঃবিভাগ ফুটবল ও ক্রিকেট উভয় খেলাতেই ক্যাপটেন। বন্ধুদের কাছে রিফাত ছিলেন অন্য রকম একজন সহযোগী।

পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান দখলকারী রিফাত বলেন, বিসিএসে আমার পড়া ছিল গঠনমূলক। কোনো কোচিং সেন্টারে কোচিং করিনি। বন্ধুরা মিলে টিমওয়ার্ক শুরু করি। একে অপরকে সহযোগিতার সঙ্গে প্রস্তুতি শুরু করি। এতে করে এ টিমের প্রায় সবাই ক্যাডার হয়েছেন বলে জানান তিনি। রিফাতের কথা সমর্থনে তার বন্ধু এডমিন ক্যাডার প্রাপ্ত সজীব জানান, রিফাতসহ আমাদের ব্যাচে যারা ক্যাডার হয়েছি তা সহযোগিতামূলক টিমওয়ার্কের মাধ্যমেই অনেকটা সম্ভব হয়েছে। সন্তান সালাহ্‌উদ্দিন রিফাতের এমন অতুলনীয় সাফল্যে খুশিতে আত্মহারা ব্যবসায়ী বাবা মো. শাহাবুদ্দিন ও মা গৃহিণী ফরিদা ইয়াসমিন।

ভবিষ্যৎ স্বপ্ন জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, পুলিশে যোগ দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব করতে চাই। তাছাড়া পুলিশি সব সেবা জনগণের দ্বার প্রান্তে সহজে পৌঁছে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এ পুলিশ ক্যাডার জয়ী।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, ২৬ অক্টোবর  ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি

Scroll to Top