কুপ্রস্তাবের অভিযোগে কুমিল্লার মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমির উদ্দিন (৫০) ও এসআই মো. মোশাররফ হোসেনের (৪০) বিরুদ্ধে এক প্রবাসীর স্ত্রী মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। ভুক্তভোগী হলেন, মেঘনা থানাধীন শিকিরগাঁও এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী রুমানা রহমান জয়া (২৬)।
আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী তৌহিদুর রহমান।
মামলার বিবরণ সূত্র থেকে জানা গেছে, রুমানা রহমান জয়া তাদের পারিবারিক ও আত্মীয়স্বজনের জায়গা জমির বিরোধের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকবার থানায় আসা যাওয়া করেন। পরিচয়ের সূত্র ধরে ওসি ছমির ও এসআই মোশাররফ জয়াকে প্রায়ই ফোন করতেন। একপর্যায়ে ওসি ছমির তাকে মেঘনা রিসোর্টে সময় কাটাতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এসআই মোশাররফ প্রায়ই ফোন করে তাকে অশোভন প্রস্তাব দিতেন। তারা প্রবাসীর স্ত্রী জয়ার মোবাইল ফোন নম্বর এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দিতেন। তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় দুজনেই প্রবাসীর স্ত্রী জয়ার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।
২৬ আগস্ট এক ঘটনাক্রমে ওই প্রবাসীর স্ত্রীর ভগিনীপতিকে গ্রেফতার করতে যায় ওসি ছমির ও এসআই মোশাররফ। সেদিন মামলার ওয়ারেন্ট চাওয়াতে এসআই মোশাররফ প্রবাসীর স্ত্রীকে টেনেহিঁচড়ে থানায় নিয়ে আসেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসআই মোশাররফ পুলিশদের সহায়তায় টেনেহিঁচড়ে প্রবাসীর স্ত্রীকে ওসির রুমে নিয়ে যান এবং রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। ওই সময় ওসি তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন এবং প্রবাসীর স্ত্রী চিৎকার করলে তাকে মেরে ফেলা এবং ধর্ষণ করার হুমকি দেন।
এ সময় তিনি প্রবাসীর স্ত্রীর মুখ চেপে ধরে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। তখন ওসিকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি তাকে চড়, থাপ্পড় এবং লাথি মারতে থাকেন। তিনি চিৎকার শুরু করলে এসআই মোশাররফ এসে তার গলা চেপে ধরেন, যাতে সে চিৎকার করতে না পারে। এ সময় মোশাররফ তাকে যৌন নির্যাতন করার হুমকি দেয়। তখন ওসি ছমির বলেন- \’আমার কথাতো শুনলি না, এখন তোর রস বাহির করমু।\’
পরে ২৭ আগস্ট সকালে ওসি ও এসআই আবার তাকে প্রস্তাব দেয় তাদের প্রস্তাবে রাজি হইলে তাকে ছেড়ে দেবে। এতেও তিনি রাজি হননি। পরে তারা প্রবাসীর স্ত্রীর হাতের মোবাইল সেটটির লক খুলে ফ্লাশ মেরে দেয়, যাতে পূর্বে তার সাথে যোগাযোগের কোনো প্রমাণ না থাকে এবং তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে একটি মামলা দায়ের করে কোর্টে চালান করে দেয়। পরে ৮ দিন জেলে থাকার পর তিনি জামিনে এসে মামলার প্রস্তুতি নেন এবং মামলাটি দায়ের করেন।
এ বিষয়ে প্রবাসীর স্ত্রী বলেন, আমার মানসম্মান সব শেষ করেছে তারা। তারা ভেবেছিল আমি প্রবাসীর স্ত্রী আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হব কিন্তু আমি রাজি হইনি। ওসি আমাকে রিসোর্টে যেতে বলেছিল। অথচ আমি সেদিনের আগে রিসোর্টই চিনতাম না। পরে আমি বললাম রেস্টুরেন্টে কেন যাব, আপনি যা বলার আমাকে থানাতেই বলেন। এতে ওসি বলেন- রিসোর্টে আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত কথা বলবেন। তিনি আমাকে রাতের বেলায় ফোন দিতেন।
তিনি বলেন, অন্য একটি মামলার কারণে আগে থেকে পরিচিত থাকায় তিনি আমার বাড়িতেও আসতে বলতেন কিন্তু আমি কোনদিন রাজি হইনি। আর এসআই মোশাররফ তো জোর করে আমার শরীরও ছুঁয়েছেন। আমি এসবের বিচার চাই। তারা ভেবেছে আমি ভয়ে কথা বলবো না। কিন্তু আমি চাই আমার মতো যাতে কোনো নারী এমন নির্যাতনের শিকার না হন।
এ বিষয়ে ওসি ছমির উদ্দিন বলেন, এই মহিলা ভীষণ উগ্র। আমরা আসামি গ্রেফতার করতে গেলে সে ওয়ারেন্ট চায়। ওয়ারেন্ট দেখালেও তিনি আমাদের আসামিকে আনতে দেননি। পরে আমরা তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধায় দেওয়ায় বাধ্য হয়ে মামলা দায়ের করি। এরপর তিনি জেল থেকে বের হয়ে এসব করছেন। মামলা করতেই পারেন; এটা বানোয়াট মামলা।
এসআই মোশাররফ বলেন, আমাদের কাছে ভিডিও রেকর্ড আছে তিনি কী করেছেন। আমরা তাকে মহিলা কনস্টেবল দিয়ে ধরে এনেছি। আমরা তাকে কুপ্রস্তাব দেইনি। সে খুব উগ্র মহিলা। এগুলো তার বানানো।
কুমিল্লার জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, আমি মাত্রই শুনলাম। এখনো কোর্ট থেকে কোনো কাগজপত্র পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।