‘গত মাসে (জুলাই ২০২২) আয় করেছি ৮৬ হাজার টাকা। আয়ের পরিমাণ কমবেশি হলেও কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা আয় হয় প্রতি মাসে। গ্রামে প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে আইপিএস ব্যবহার করেও ল্যাপটপ বা কম্পিউটার দীর্ঘক্ষণ চালানো যায় না। বিদ্যুৎ থাকলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে মাসে আমার আয় হতো দুই লাখ টাকা।’ এ কথাগুলো বেশ আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের মেয়ে তৃষ্ণা দিও।
তৃষ্ণা দিও অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েও তা ফিরিয়ে দিয়ে নিজ গ্রাম কাকরকান্দিতেই শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ। আর এই কাজ করেই তিনি বৈদেশিক মুদ্রা ডলার আয় করছেন।
২০১৯ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) সম্পন্ন করে তৃষ্ণা দিও ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে চাকরি নেন। তবে নিজেকে কাজের ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে চলে যান নিজ গ্রাম কাকরকান্দিতে। গ্রাম থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পাঠাতে থাকেন জীবনবৃত্তান্ত। তবে তেমন কোনো সাড়া পাননি। এমন সময় পরিচিত একজনের কাছে জানতে পারেন, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করা যায়। কালক্ষেপণ না করে গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সে ভর্তি হন ময়মনসিংহের নকরেক আইটি ইনস্টিটিউটে। প্রতি শুক্র ও শনিবার গ্রাম থেকে ক্লাস করতে যেতেন ময়মনসিংহে।
ময়মনসিংহের গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে তৃষ্ণা দিওর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রায় ছয় মাস পর তিনি ৮৬ ডলারের একটি কাজ পান। কাজের মান ভালো হওয়ায় সেই গ্রাহকের মাধ্যমে আরও সাতটি কাজ করেন। বর্তমানে তৃষ্ণা বিভিন্ন ধরনের পোস্টারের নকশা, বিজনেস কার্ড, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা, পরিচয়পত্র, রেস্তোরাঁর খাবারের তালিকা, প্রচারপত্র ইত্যাদি নকশার কাজ করেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুতে অবশ্য কাজ পেতে বা করতে তৃষ্ণার একটু সমস্যা হয়েছিল।
তৃষ্ণা দিওর বলেন, \”আমার মনে আছে, বাংলাদেশের এক গ্রাহক আমাকে তাঁর একটি কাজের নকশা ১৭ বার পরিবর্তন করিয়ে নিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা বাড়ে আমার। ভালো মানের কাজের অর্ডার পেতে থাকি। ফলে আয়ের পরিমাণও বাড়ে।\”
তিনি আরও বলেন, নিজ ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করলেও গ্রামে কানাঘুষা চলতো। অনেকে বলতেন, সারা দিন ঘরের মধ্যে কম্পিউটারের সামনে বসে কী করেন? কম্পিউটারে বসে থাকলে কি টাকা আয় করা যায়? তৃষ্ণা দিওর বর্তমান সফলতাই এসব প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছে।
তৃষ্ণা দিও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। স্পনসরও তৈরি ছিল। কিন্তু আমার বাবা বললেন, “গ্রামে বসেই যদি আয় করতে পারো, তাহলে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে লাভ কী?” আমিও ভেবে দেখলাম, কেন যাব আমার গ্রাম ছেড়ে বিদেশে। প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে গ্রামেই থেকে গেলাম। বর্তমানে আমি প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা আয় করি। ভবিষ্যতে গ্রামের ছেলেমেয়েদের ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই।’