ফেইসবুক ও ইউটিউবকে ভুয়া সংবাদ ও ভিডিও সরাতে নোটিস

উসকানি দেয় কিংবা জনজীবনে অস্থিরতা তৈরি করে এমন ভুয়া সংবাদ ও ভিডিও সরাতে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী ফেইসবুক ও ইউটিউবকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন। নোটিসদাতার দাবি, বাংলাদেশে ‘অস্থিরতা তৈরির উদ্দেশ্যে’ ভুয়া সংবাদ ও ভিডিও ছড়ানো হলেও এসব কোম্পানি ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নিচ্ছে না।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিলুফার আনজুম এবং জজ কোর্টের আইনজীবী আশরাফুল ইসলামের পক্ষে আইনজীবী আরাফাত হোসেন খান আজ রোববার ওই নোটিস পাঠিয়ে এ বিষয়ে ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নিতে বলেছেন ওই দুই কোম্পানিকে।

ফেইসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষ ছাড়াও মেটা বাংলাদেশের পাবলিক পলিসি বিষয়ক প্রধান শাবনাজ রশিদ দিয়া, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ নোটিস পাঠানো হয়েছে।

নোটিসে বলা হয়, “সম্প্রতি দেখা গেছে ফেইসবুক ও ইউটিউব তাদের নজরদারি কৌশল পুরোপুরি অনুসরণ করছে না। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি বেশি ঘটছে। বাংলাদেশে প্রচুর ভুয়া সংবাদ, কনটেন্ট, ছবি ও ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে।

“এতে করে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিজীবীর সম্মানহানি হচ্ছে। পররাষ্ট্রনীতির অনেক স্পর্শকাতর তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সম্প্রচারের কারণে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বাংলাদেশেরও।”

বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশকে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ হিসেবে উপস্থাপন করা ও দেশে ‘অস্থিরতা তৈরির উদ্দেশ্যে’ এমন কাজ করা হচ্ছে বলে নোটিসদাতার ভাষ্য।

ওই নোটিসে বলা হয়, করোনাভাইরাসের পরবর্তী সময়ে ও রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। পশ্চিমা দেশসহ বেশ কিছু দেশ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব সমস্যা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির মতো সমস্যায় জর্জরিত। সারাবিশ্বেই এখন অস্থিরতা তৈরিতে ফেইসবুক ও ইউটিউবকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গুজব ও ভুয়া খবর।

“বিটিআরসি ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির নীতি এবং ফেইসবুক-ইউটিউবের প্রবিধান না জানার কারণে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে সহিংসতা ও অস্থিরতা তৈরি করছে। ফেইসবুক ও ইউটিউবে প্রকাশ করা এসব ভিডিও তাদের নিজেদের নীতি পরিপন্থি।”

অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের ওপর নজর রাখতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্টরা ‘ব্যর্থ হয়েছেন’ দাবি করে নোটিসে বলা হয়, “এতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ও জনজীবনের শৃঙ্খলার জন্য হুমকি। ভুয়া তথ্য রাষ্ট্রযন্ত্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে, যা সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩৮ ও ৪৪ ধারার লঙ্ঘন।”

এছাড়া এরফলে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১ এর ৩০, ৬৪, ৭৬, ৯৭ ধারা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ৮, ১৩, ১৬, ২৫ ধারা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৪৬ ধারা লঙ্ঘন হয়েছে বলেও নোটিসদাতার দাবি।

নোটিসে ভুয়া ও উসকানিমূলক কয়েকটি ভিডিওর লিঙ্ক এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত ফ্যাক্টচেকের লিঙ্কও যুক্ত করা হয়েছে।

গণমাধ্যমকে আইনজীবী আরাফাত হোসেন খান বলেন, “ফেইসবুক এবং ইউটিউবের মত জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়াগুলো অবশ্যই আমাদের বাকস্বাধীনতা চর্চার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, বাকস্বাধীনতার চর্চার নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য আমরা যেন সহিংসতা এবং নাশকতাকে উৎসাহিত না করি।”

এ বিষয়ে বিটিআরসি, ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি, ফেইসবুক, ইউটিউবসহ সব কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী আরও সচেতন ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানান তিনি।

Scroll to Top