যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানোর পর থেকে ডলারের মান বিশ্ববাজারে বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে অন্যান্য দেশগুলোর মুদ্রার পতন হলেও বেশকিছু সুবিধা পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র- যা কিনা এ মূহূর্তে দেশটির বেশ প্রয়োজন।
সম্প্রতি বিগত ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙে ইউরোর দাম ডলারের দামের সমান হয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি ডলারের বিপরীতে ইউরোর মান প্রায় সমান- যা একটি মাইলফক। এভাবে ডলারের দাম বাড়ায় বাকিদের কপালে ভাঁজ পড়লেও যুক্তরাষ্ট্র পাচ্ছে বাড়তি কিছু সুবিধা- যা কিনা চলমান সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পরিত্রাণের মাধ্যম হবে।
আমদানি ব্যয় কমবে
দেশের চাহিদা মেটাতে অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রকে আমদানির ওপরে নির্ভর করতে হয়। এতদিন ইউরোপের বাজারে বেশি ডলারে পণ্য আমদানি করলেও এখন থেকে ইউরোপীয় পণ্য আমদানি করা যাবে একই দামে।
বিশেষ করে ইউরোপের বাজারে অডি, মার্সিডিজ, পোরশে ও ফেরারির মতো গাড়িগুলো আগে ক্রয় করতে লাখ ডলার খরচ করতে হতো, এখন তা পাওয়া যাবে ইউরোর দামেই।
এ ছাড়া বিশ্বের যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র খাদ্যপণ্য আমদানি করে থাকে, সেখান থেকে কম দামে আমদানি করতে পারবে। এতে করে বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমে আসবে- যা দেশটির জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
আমদানি ব্যয় কমলে কমে আসবে প্যণের দাম। কদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্র রেকর্ড পরিমাণ মূল্যস্ফীতি প্রত্যক্ষ করেছে। ডলারের দাম বাড়ায় ধারণা করা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি কমে আসবে, সহনীয় হবে জীবনযাত্রা।
দুদিক থেকে লাভ আসবে পর্যটনে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব নাগরিক ইউরোপ কিংবা অন্যান্য দেশে ঘুরতে যান, ডলারের দাম বাড়ায় তাদের অধিক মূল্য পরিশোধ করতে হবে না।
উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, যখন ইউরোর দাম ডলারের তুলনায় বেশি ছিল তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা একজন পর্যটককে বেশি ডলার খরচ করতে হতো। এতে করে হোটেল খরচ, খাবার ও ভ্রমণ ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যেত। এখন ডলারের দাম কমায়, দেশে যেমন খরচ হবে, দেশের বাইরে একই খরচ হবে।
অন্যদিকে ইউরোপ ছাড়া অন্যান্য দেশ, যেখানে ডলারের মানের থেকে স্থানীয় মুদ্রার মান কম, সেখানে আরও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভ্রমণের আগ্রহ বাড়বে পর্যটকদের।
অন্যদিকে বাইরে থেকে যারা যুক্তরাষ্ট্রে ঘুরতে আসবেন তাদের খরচ করতে হবে আগের থেকে বেশি ডলার। এতে করে পর্যটনখাতে দেশটি আরও বেশি লাভবান হবে।
বিনিয়োগ বাড়বে
ডলারের দাম বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কেননা যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করলে তারা ডলার কমাতে পারবে, যার মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য মুদ্রাবাজারে নিজদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করা যাবে।
দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ায় দেশটিতে বাড়বে রাজস্ব, কাজের সুযোগ ও অর্থ প্রবাহ। এতে করে অন্যান্য সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আরও চাঙা হয়ে উঠবে।
রিজার্ভ শক্তিশালী হবে
বৈশ্বিক রিজার্ভ হিসাবের প্রধান মাধ্যম ডলার। মুদ্রাটির মান বাড়ায় বিশ্ববাজারে বাড়বে ডলার সংগ্রহের চাহিদা। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক, প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্র ও কর্ম ইচ্ছা দুটিই বাড়বে।
যদিও সম্প্রতি রাশিয়া, ইরান, চীন ও ভারত জানিয়েছে, তারা ডলার নির্ভরতা কমাতে চায়, কিন্তু অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, বৈশ্বিক রিজার্ভে ডলারের প্রধান্য এখনো চোখে পড়ার মতো।
যদিও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সাদা চোখে যেটাকে লাভ মনে হচ্ছে, সেটিই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ডলারের দাম বাড়ায় কমে আসতে পারে রফতানি, বিশ্ববাজারে বাড়তে পারে সস্তা পণ্যের দাম, এছাড়াও বাকি শক্তিধর দেশগুলো ডলার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির বাজারে আপাতত স্বস্তির হাওয়া দিচ্ছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি।
সংবাদ সূত্রঃ ইনভেস্টোপেডিয়া, ব্লুমবার্গ, ইকোনমিস্ট