ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে গতকাল থেকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর টোল আদায় শুরু করেছে। এর ফলে ৫৫ কিলোমিটার দূরত্বের এ এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনকে আলাদা করে তিনটি সেতুতে টোল দিতে হবে না। তবে দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনকে এক্সপ্রেসওয়ে এবং পদ্মা সেতুতে দুবারে টোল দিতে হবে। এদিকে এক্সপ্রেসওয়ের টোল চূড়ান্ত হওয়ায় বিআরটিএ আবারও বাসের ভাড়া সমন্বয় করেছে। এতে আগের চেয়ে বেড়েছে এ রুটে চলাচলকারী বাসের ভাড়া।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বাসভাড়া সঠিক দূরত্ব অনুযায়ী নির্ধারণ না করার। এদিকে মালিক সমিতির নেতাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ টোল নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করেনি। তবে বাসভাড়া সমন্বয় করা হয়েছে টোলের কারণে।
বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস ভাড়ার বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, আগে এক্সপ্রেসওয়ের তিন সেতুতে বড় বাসে টোল দিতে হতো মোট ৩৩০ টাকা, এখন একবারে এক্সপ্রেসওয়েতে টোল ৪৯৫ টাকা। সে ক্ষেত্রে বাসে ১৬৫ টাকা বেশি টোল দিতে হবে।
এর আগে পদ্মা সেতুর টোল অনুযায়ী, ঢাকার সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যের ১২ রুট এবং চট্টগ্রাম-খুলনা, কক্সবাজার-বরিশাল ও চট্টগ্রাম-বরগুনা রুটের নতুন ভাড়াও ঠিক করে দিয়েছিল বিআরটিএ। ওই সময় এসব রুটে আগের চেয়ে বাসভাড়া ১০ টাকা বাড়ানো হয়। এখন থেকে এ ভাড়া আরও বাড়ল।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুর টোলের সঙ্গে ১ টাকা ৮০ পয়সা প্রতি কিলোমিটার হিসেবে বাসে ৪০ আসন ধরে ভাড়ার তালিকা করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুর টোলের পর ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বাসের বিভিন্ন রুটে বাসভাড়া বেড়েছে। বরিশাল যেতে আগের চেয়ে ৩৩ টাকা বেশি লাগছে, গোপালগঞ্জ যেতে বেড়েছে ৩১ টাকা, খুলনায় ৩৮ টাকা, শরীয়তপুর যেতে ৩১ টাকা, পিরোজপুরে ৪৭ টাকা, বাগেরহাটে ৩৬ টাকা, পটুয়াখালীতে ৪২ টাকা, মাদারীপুরে ৭৫ টাকা, সাতক্ষীরায় ৩৫ টাকা, ফরিদপুরে ৩১ টাকা এবং কুয়াকাটা যেতে ৬৬ টাকা ভাড়া বেড়েছে। তা ছাড়া কক্সবাজার থেকে বরিশালে বেড়েছে ৩৯ টাকা, চট্টগ্রাম থেকে খুলনায় ৪৩ টাকা এবং বরগুনায় ৫৯ টাকা ভাড়া বেড়েছে।
ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, সঠিক দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করে না বিআরটিএ। এটি না করা হলে যাত্রীদের বেশি ভাড়া দিতে হয়; ভোগান্তি বাড়ে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগের কোনো শেষ নেই। তারা কি অভিযোগ বুঝে করে নাকি না বুঝেই—এটাই দেখার বিষয়। নিয়ম মেনেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ের টোল নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি কর্তৃপক্ষ। টোল বাড়ায় বাসের ভাড়াও বেড়েছে।’
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের টোল আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা এবং এক্সপ্রেসওয়ের টোল ৩০। এতে মোট টোলের পরিমাণ ১৩০ টাকা। প্রাইভেট কারের ক্ষেত্রে সেতুতে ৭৫০ টাকা এবং এক্সপ্রেসওয়েতে ১৪০ টাকা, মোট টোল ৮৯০ টাকা। মাইক্রোবাসে সেতুতে ১ হাজার ৩০০ টাকা, এক্সপ্রেসওয়েতে ২২০ টাকা, মোট টোল ১ হাজার ৫২০ টাকা দিতে হবে। মিনিবাসে সেতুতে ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং এক্সপ্রেসওয়েতে ২৭৫ টাকা, মোট টোল ১ হাজার ৬৭৫ টাকা। বড় বাসের ক্ষেত্রে সেতুতে ২ হাজার ৪০০ টাকা, এক্সপ্রেসওয়েতে ৪৯৫ টাকা, মোট টোল ২ হাজার ৮৯৫ টাকা। মিনি ট্রাকে সেতুতে ১ হাজার ৬০০ টাকা, এক্সপ্রেসওয়েতে ৪১৫ টাকা, মোট টোল ২ হাজার ১৫ টাকা। মাঝারি ট্রাকের ক্ষেত্রে সেতুতে ২ হাজার ১০০ টাকা, এক্সপ্রেসওয়েতে ৫৫০ টাকা, মোট টোল ৬৫০ টাকা।