পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের জবাব

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ উত্থাপন করেন। ড. ইউনূস সেসব অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। গতকাল বুধবার ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব অভিযোগের জবাব দেওয়া হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে ৬০ বছর বয়স হলেও পদত্যাগ না করে পাল্টা মামলা করার প্রসঙ্গে জবাবে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয় এর পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে একটি চুক্তির অধীনে। এই নিয়োগের জন্য কোনো বয়সসীমা আইনে বা পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে উল্লেখ ছিল না।

প্রফেসর ইউনূস ৬০ বছর বয়সে পদার্পণ করলে তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পরিচালনা পরিষদকে জানান যে, যেহেতু তার বয়স ৬০ বছর হয়েছে তারা একজন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। পরিচালনা পরিষদ অন্য কোনোরূপ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকেই দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেন। পরিচালনা পরিষদ তার বর্তমান নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবার পর তাকেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পুনঃনিয়োগ দেয়। সে সময় তার বয়স ছিল ৬১ বছর ৬ মাস। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিয়মিত পরিদর্শন প্রতিবেদনগুলির একটিতে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিলে গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়টি ব্যাখা করে। পরে ২০১১ সালে পদত্যাগ করতে বলায় গ্রামীণ ব্যাংকের মৌলিক আইনি মর্যাদা রক্ষায় তিনি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। এর সঙ্গে চাকরি ধরে রাখার কোনো সম্পর্ক নেই।

হিলারি ক্লিনটনসহ বিশিষ্টজনদের দিয়ে ফোন করানোর বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. ইউনূসের অপসারণ বিশ্বব্যাপী সংবাদে পরিণত হয়েছিল। তারা অধ্যাপক ইউনূসকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না, তারা দেখতে চাইছিলেন গ্রামীণ কর্মসূচিগুলোর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। এর সঙ্গে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বিষয়টিকে মিশিয়ে ফেলে একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কাহিনি সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সব মানুষের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন, তিনিও এ স্বপ্নে বিশ্বাসী। তিনি এই ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানান।

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ এবং একজন সম্পাদককে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বৈঠক করার বিষয়ে জবাবে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ দুই বন্ধুর খেয়ালখুশি কিংবা একজন পত্রিকা সম্পাদকের সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার ওপরও নির্ভর করে না। প্রফেসর ইউনূস পদ্মা সেতু বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে কখনও কোনো অভিযোগ বা অনু্যোগ জানাননি। সুতরাং বিষয়টি নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত।

ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে তিন লাখ ডলার অনুদান প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রফেসর ইউনূস কখনোই ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে কোনো অংকের কোনো অনুদান দেননি। অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।

মুহাম্মদ ইউনূস একটি ফাউন্ডেশনকে ছয় মিলিয়ন ডলার অর্থ দেওয়া এবং এক চেকে ছয় কোটি টাকা ব্যক্তিগত হিসাবে নেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে জবাবে বলা হয়েছে, এটা সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত এবং মানহানিকর অভিযোগ। তা ছাড়া আগেই সরকার প্রফেসর ইউনূসের সব ধরনের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। সুতরাং সব তথ্যই সরকারের কাছে আছে।

Scroll to Top