রাষ্ট্রপক্ষ ডা. সাবরিনার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে অর্থ আত্মসাতের মামলার যুক্তিতর্কের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ আটজনের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে। আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

রাষ্টপক্ষে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান এ যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি সেখানে দাবি করেন, রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণে মামলাটি আসামিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। তাই আসামিদের রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক।

এরপর আদালত ডা. সাবরিনার পক্ষে একজন জব্দ তালিকার সাক্ষীর জেরা বাকি থাকায় আদালত ২৯ জুন জেরার জন্য দিন ঠিক করেন।

প্রসিকিউটর আজাদ রহমান বলেন, ‘আগামী ২৯ জুন জেরা হলেই মামলাটি রায়ের জন্য যাবে। মামলাটিতে সাতটি ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়। সেখানে মোট ২১ বছর ৬ মাসের সাজা রয়েছে। আমরা আদালতের কাছে সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছি।’

মামলার অপর আসামিরা হলেন ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফ চৌধুরী, আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা আক্তার পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস ওরফে বিপুল দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা রুমা।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ২২ জুন জেকেজির সাবেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে আটক করে পুলিশ। হিরু স্বীকারোক্তি দিয়ে জানান, তিনি ভুয়া করোনা সার্টিফিকেটের ডিজাইন তৈরি করতো। যার সঙ্গে জেকেজি গ্রুপের লোকজন জড়িত। ওই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জেকেজির সিইও আরিফুলসহ চারজনকে আটক করে।

সিইওকে জানান, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীর জ্ঞাতসারেই সব কিছু হয়েছে। এরপর ওই বছর ১২ জুলাই ডা. সাবরিনা চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়ে ১৩ জুলাই ৩ দিনের রিমান্ডে যায়। ওই রিমান্ডের পর ১৭ জুলাই তার ফের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আর মামলায় ২৩ জুন আরিফ চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে যান। পরবর্তীতে ১৫ জুলাই তাকে ফের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে সব আসামিই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

২০২০ সালের ৫ আগস্ট এ মামলায় ঢাকা সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। একই বছর ২০ আগস্ট সাবরিনাসহ আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।

ডা. সাবরিনা জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক। সাবরিনা ডা. আরিফের চতুর্থ স্ত্রী। তার প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী রাশিয়া ও লন্ডনে থাকেন। তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে তালাক হয়েছে তার। চতুর্থ স্ত্রী ডা. সাবরিনার কারণেই করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজ পায় জেকেজি হেলথকেয়ার।

প্রথমে তিতুমীর কলেজ মাঠে স্যাম্পল কালেকশন বুথ স্থাপনের অনুমতি মিললেও প্রভাব খাটিয়ে ঢাকা, নায়ায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল জেকেজি। নমুনা সংগ্রহের জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ দেয় তারা। তাদের হটলাইন নম্বরে রোগীরা ফোন দিলে মাঠকর্মীরা বাড়ি গিয়ে এবং বুথ থেকেও নমুনা সংগ্রহ করতেন।

এভাবে নমুনা সংগ্রহ করে তারা ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের রিপোর্ট প্রদান করেন। যার মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ জনের রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানটি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে। প্রত্যেক সার্টিফিকেট প্রদানের বিনিময়ে তারা পাঁচ হাজার টাকা করে নিয়েছেন।

Scroll to Top