নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়, পদ্মা নদীর পারে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় ‘ইকোপোর্ট’ নির্মাণে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ‘ইকোপোর্ট’ নির্মাণে প্রকল্পের আওতায় রিভারক্রুজ, চরে অবকাশ যাপনকেন্দ্র, প্রাকৃতিক ওয়াকওয়ে ট্রেইল, নৌজাদুঘর, ইকোপার্কসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হবে।
বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনায় পদ্মা সেতু কেন্দ্র করে ধারণা করেন, পদ্মা সেতুতে বছরে ৬০ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম হবে। পদ্মা সেতু চালুর পর মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অব্যবহৃত ১৫-১৮ একর জমিতে ‘ইকোপোর্ট’ স্থাপনা তৈরি হবে।
এতে সম্ভাব্য ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে ‘ইকোপোর্ট’ নির্মাণ করা হবে। এটির মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) । নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে তথ্যটি জানা গেছে।
আরও তথ্য জানা গেছে, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে রোববার অনুষ্ঠিত এক পর্যালোচনা সভায় ‘ইকোপোর্ট’ নির্মাণ প্রকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করে বিআইডব্লিউটিএ। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহণ সচিব মো. মোস্তফা কামাল। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে রোববার অনুষ্ঠিত সভায় কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে বিআইডব্লিউটিএকে।
এ বিষয়ে আরও জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর কার্যক্রম অনেক সীমিত হয়ে পড়বে বলে ধারণা করছি। পদ্মা সেতু ও নদী দেখতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সেখানে সমাগম হবে।
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য আধুনিক বন্দর সুবিধা নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সেখানে আধুনিক নৌবন্দর, নদী ভ্রমণে আধুনিক নৌযান, পর্যটকদের নৌনিরাপত্তা সামগ্রী ও নদীর তীরভূমিতে বসার ব্যবস্থা করা হবে পরিকল্পনা করেন। এছাড়া সেখানে নৌ ঐতিহ্য সংবলিত জাদুঘরও নির্মাণ করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। তাছাড়া জরুরি তথ্য জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া নদী বন্দর ২০২০-২১ অর্থবছরে এক কোটি ৪০ লাখ যাত্রী ও ৩০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহণ হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে এ ঘাট ইজারা থেকে বিআইডব্লিউটিএর আয় হয়েছে ৭ কোটি ৯০ লাখ ১২ হাজার ৩৭৬ টাকা। এখন চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৬৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। পদ্মা সেতু চালুর পর শিমুলিয়ায় গাড়ি ও যাত্রী পারাপার কমে যাবে।
এ বাস্তব পরিস্থিতিতে নতুন আয়ের উৎস বের করতে শিমুলিয়ায় ইকো বন্দর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যদিও পদ্মা সেতু চালুর পরও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি রুটে সীমিত আকারে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট সার্ভিস চালু রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
তথ্য সূত্রে জানায়, ঢাকা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিমুলিয়ায় এ ইকো বন্দর নির্মাণ করা হবে। এ ধরনের বন্দর বাংলাদেশে এটিই প্রথম। সেতু চালুর পর শিমুলিয়া ঘাটের ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট সার্ভিস সীমিত হয়ে পড়বে।
গাড়ি ও মানুষের যাতায়াত কমে যাবে। তখন বিআইডব্লিউটিএর ১৫ থেকে ১৮ একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় থাকবে ধারণা করেন । ওই জমিতে নতুন পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তাছাড়া সরকার জমি দেবে, পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনা নির্মাণ করবে। ইকোপার্কের ইকোনমিক লাইফ ধরা হয়েছে ৩০ বছর। তবে এসব স্থাপনা নির্মাণে ফলে নদীভাঙন অন্যতম ঝুঁকি বিবেচনা করা হচ্ছে।
রেললাইনের কর্মযজ্ঞও স্বপ্ন জয়ের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সবশেষ প্রস্তুতির সঙ্গে চলছে । স্লিপার বসানো হচ্ছে সেতুর জাজিরা প্রান্তে পাথরবিহীন রেললাইনের জন্য। কর্মীরা দেশের প্রথম এই আধুনিক রেললাইন নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। রেললাইনের রেলগুলো ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার প্রকল্প শেষ হবে ২০২৪ সালে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মূল পদ্মা সেতুতে জুলাই থেকে রেললাইন বসানো শুরু হবে। এর প্রস্তুতি হিসাবে জাজিরা প্রান্তে রেল ভায়াডাক্টে পাথরবিহীন রেললাইন বসানোর কাজ চলছে। অগ্রগতি ৭২ শতাংশ রেল সংযোগ সেতুর রেললাইন বসানোর হবে । কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ হয়েছে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া অংশে পর্যন্ত।
পদ্মা সেতুর সড়কপথ উদ্বোধন কেন্দ্র করে আমরা সেতুর রেললিংক প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে কাজ করছি, পদ্মা সেতুর রেললিংক প্রকল্পের পরামর্শক লে. কর্নেল এইচএম তহিদুল ইসলাম বলেন।
পদ্মা সেতু ভায়াডাক্ট ২ ও ৩ এ পাথরবিহীন ট্র্যাক বসানোর কাজ চলমান। তিনি আরও বলেন, পাথরবিহীন ট্র্যাক বসানোর কাজ যেন সময়ের আগেই শেষ করা যায় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। পদ্মা সেতু উদ্বোধের পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা সেতুর ভেতরের অংশে কাজ করব।