উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসংঘের একটি নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবে চীন ও রাশিয়া ভেটো দিয়েছে। এর ফলে কিম জং উনের দেশ নতুন করে নিষেধাজ্ঞার খড়গ থেকে বেঁচে গেল।
চলতি বছর একের পর এক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ মে) পিয়ংইয়ংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে।
কিন্তু তাইওয়ানসহ বেশ কিছু ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যে চীন এদিন রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। প্রথমবারের মতো ভেটো দেয় উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে।
গত কয়েক দশক ধরে ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্র প্রকল্প চালিয়ে আসছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির পরমাণু কর্মসূচিকে বিশ্বের জন্য ‘হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করে জাতিসংঘ। সেই সঙ্গে এই কর্মসূচি বাতিলে চাপ প্রয়োগের জন্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত হয়, যা শুরু হয় ২০০৬ সালে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ছাড়াও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের তালিকায় রয়েছে চীন ও রাশিয়া। পিয়ংইয়ংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাবে প্রায় প্রতিবারই সম্মিলিত পদক্ষেপ নিয়েছে এই পাঁচ রাষ্ট্র। কিন্তু পিয়ংইয়ং প্রশ্নে এবারই প্রথম দেশগুলোর মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন দেখা গেল।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ অস্থায়ী সদস্যসহ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১৩ সদস্যই ওয়াশিংটনের উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া বিপক্ষে ভোট দেয়। ফলে প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে যায়।
রয়টার্স জানিয়েছে, এ খসড়ায় উত্তর কোরিয়ায় তেল ও তামাক রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এতে পিয়ংইয়ংভিত্তিক হ্যাকিং গোষ্ঠী ল্যাজারাসকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথাও বলা হয়। এই গোষ্ঠীটি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।
গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। সবশেষ বুধবার (২৫ মে) একসঙ্গে তিনটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে দেশটির সেনাবাহিনী। এর পরদিনই নিরাপত্তা পরিষদে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব তোলে যুক্তরাষ্ট্র।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তর-পূর্ব এশিয়া সফর শেষ করে দেশে ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপরই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে উত্তর কোরিয়া। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে তাদের একটি বৃহত্তম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ওপর নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে দেশটি।
চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতায় নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব খারিজ হয়ে যাওয়ার পর একে ‘হতাশাজনক’ বলে অভিহিত করেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড। এই পদক্ষেপে উত্তর কোরিয়া আরও সাহসী হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লিন্ডা আরও জানান, চলতি বছর উত্তর কোরিয়া ৬টি আইসিবিএম উৎক্ষেপণ করেছে। তারা আরও একটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নিবেনজিয়া বলেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ পুরোপুরি ‘অচল অবস্থা’ তৈরি করবে। চীনের রাষ্ট্রদূত ঝং চান বলেন, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো লাভ হবে না; বরং আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ও সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়বে।
১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির তহবিল বন্ধে স্থির ও সর্বসম্মতভাবে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গেছে। সবশেষ ২০১৭ সালে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করে পরিষদ। তবে মানবিক বিবেচনায় দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য চাপ দিচ্ছে চীন ও রাশিয়া।
সংবাদ সূত্রঃ আল-জাজিরা