রুশ হামলায় তছনছ মারিউপোল, আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নাকচ

গতকাল মঙ্গলবার রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিয়েভের একটি শপিং মল পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। এতে নিহত হয়েছে ছয় জন। হামলার পর সেখানে ইউক্রেনীয় সেনা মোতায়েন করা হয়। রাতভর আবাসিক এলাকাতেও হামলা হয়েছে। রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ প্রায় প্রতিটি শহরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দোনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থিত বন্দরনগরী মারিউপোলে ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি অন্য সব শহরকে ছাড়িয়ে গেছে।

গত ২৬ দিনের যুদ্ধে রুশ বাহিনীর একের পর এক হামলায় সাজানো গোছানো এই শহরটি যেন এখন মৃত্যুপুরী। প্রতিদিনই মুহুর্মুহু বোমা এসে পড়ছে বিভিন্ন জায়গায়, মারা যাচ্ছে মানুষ। গোলার আঘাতে এরই মধ্যে বিধ্বস্ত হয়েছে শহরের ৯০ শতাংশ ভবন। কিছু মানুষ মানবিক করিডোর ধরে শহর ছাড়তে পারলেও এখনো বহুসংখ্যক পরিবার নিজেদের ঘরবাড়ি আঁকড়ে রয়েছেন।

বিবিসি, সিএনএনসহ পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর দাবি, মরিপোলে এখনো ৩ লাখের বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তারা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্য সুযোগসুবিধা বিচ্ছিন্ন আছেন। শহরে মারাত্মক খাদ্যেরও সংকট চলছে। এমন অবস্থায় গত রবিবার রাতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে লড়াইরত ইউক্রেনীয় সেনা এবং মরিপোল নগর সরকারকে গতকাল সোমবার মস্কো সময় ভোর পাঁচটার মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান জানানো হয়। পরিবর্তে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় শহরের বাসিন্দা এবং সৈন্যদের দুটো নিরাপদ করিডোর দিয়ে চলে যাওয়ার। কিন্তু মরিপোল কর্তৃপক্ষ এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। ফলে অবরুদ্ধদের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কিত সবাই।

বিবিসির খবরে বলা হয়, আত্মসমর্পণ না করলে রুশ সৈন্যরা কী করবে তা এখনো স্পষ্ট করেনি মস্কো। মরিপোলের মানবিক পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে শহরের এমপি ইয়ারোস্লাভ জেলেজনিয়াক বলেন, তার শহর এখন কার্যত পৃথিবীর বুকে নরক। পুরো শহরটি ঘিরে রয়েছে রুশ সৈন্যরা। বিদ্যুৎ নেই, পানি সরবরাহ নেই। খাবার এবং ওষুধের মজুদ খুবই কম। স্থলপথ ছাড়াও আকাশ এবং সাগর থেকে দিনের পর পর রুশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং গোলা এসে পড়ার কারণে অধিকাংশ মানুষ এখন ঠান্ডা অন্ধকার আশ্রয়কেন্দ্র এবং বেজমেন্টের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। রুশ সৈন্যদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের লড়াই এখন মরিপোল শহরের কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। ফলে শহর থেকে পালানোর সুযোগও চলে যাচ্ছে।

গত রবিবারও শহরের একটি আর্ট স্কুলে ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা হয়েছে। সিটি কাউন্সিল দাবি করে, ওই স্কুলে কমপক্ষে ৪০০ বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। তবে হামলায় কত হতাহত হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত নয়। রুশ সেনারা মরিপোলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে মারাত্মক ধ্বংসাত্মক ভ্যাকুয়াম বোমা নিক্ষেপ করছে বলেও খবর এসেছে। এই বোমা এতটাই ভয়ঙ্কর যে এটি যে স্থানে বিস্ফোরিত হবে, সেখানে থাকা মানুষ স্রেফ পুড়ে বাষ্পীভূত হয়ে যাবে।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের পোডিলিস্কি আবাসিক এলাকায় রবিবার রাতে একটি মার্কেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রাণ গেছে ৮ জনের। এ ছাড়া বহু মানুষ এ নো ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে। এ ছাড়া শহরের আশপাশ এলাকাগুলোতেও হামলা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় কিয়েভে কাল বুধবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করেছে নগর কর্তৃপক্ষ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সুমিতে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি রাসায়নিক কারখানা থেকে গতকাল বিষাক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস বের শুরু করে। আপাতত গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণে এলেও কারখানাটির পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থান করা লোকজনকে অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে। আরেক পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রিভনে গতকাল ইউক্রেনের একটি সামরিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রেও দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা চালায় রাশিয়া।

এদিকে চলমান যুদ্ধ নিরসনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইসরায়েলের সাহায্য কামনা করেছেন। গতকাল এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, অর্থবহ আলোচনার উপায় খুঁজতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেত। আমরা তার এমন প্রচেষ্টার জন্য কৃতজ্ঞ। যেন আমরা শিগগিরই বা পরে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারি, সেটি সম্ভবত জেরুজালেমে। এ ছাড়া সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি জানান, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তিনি আলোচনায় রাজি। তিনি বলেন, আমি তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। আমরা গত দুই বছরই আলোচনার পক্ষে ছিলাম। আমি মনে করি, আলোচনা ছাড়া এই যুদ্ধের ইতি টানা অসম্ভব।

অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্টের ক্রেমলিন দপ্তর জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধে শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এমন সব দাবি তুলে ধরা হচ্ছে, যেগুলো রাশিয়ার কাছে অগ্রহণযোগ্য। এগুলো করে কার্যত শান্তি আলোচনা আটকে দিচ্ছে কিয়েভ।

সংবাদ সূত্রঃ বিবিসি, সিএনএন

Scroll to Top