পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন জেল হত্যা মামলার সন্দেহভাজন এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে দেশে ফেরাতে সরকার সব ধরনের আইনি প্রচেষ্টা চালাবে। আজ বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ গ্রেফতার এম খায়রুজ্জামানকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা খবরটা পেয়েছি। যত ধরনের আইনি প্রক্রিয়া আছে, সেগুলোতে আমরা প্রচেষ্টা চালাব।
এর আগে, এম খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশে পাঠানোর ওপর আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ার মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় বিকালে তাকে মুক্তি দেয় পুত্রাজায়ায় ইমিগ্রেশন বিভাগ।
স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমকে মুক্তি পাওয়ার পর খায়রুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সরকারের ‘মিথ্যা অভিযোগে’ আটক হয়ে আমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলাম। আমার পরিবারের সদস্যরাও আমার স্বাস্থ্যগত কারণে চিন্তিত ছিলেন।
এর গত ৯ ফেব্রুয়ারি মালয়শিয়ার অভিবাসন আইনে সেলাঙ্গর রাজ্যের আমপাংয়ের একটি বাসা থেকে খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার করে দেশটির পুলিশ।
ওই দিন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিনের বরাতে মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার জানায়, একটি অভিযোগ থাকায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ‘তার দেশের একটি অনুরোধ রয়েছে’।
একই দিনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামান ফিরিয়ে দিতে দেশটির সরকার রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি জানান, খায়রুজ্জামান অভিবাসন আইনে গ্রেফতার হয়েছেন। এ আইনে প্রবাসীরা অপরাধ করলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ আছে।
তবে এরইমধ্যে তার স্ত্রী রিটা রহমান খায়রুজ্জামানের ঢাকায় ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে কুয়ালালামপুর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপেক্ষিতে বিচারক মোহাম্মদ জাইনি মাজলান বন্দি খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিত করতে অভিবাসন বিভাগকে নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান ১৯৭৫ সালের জেল হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন এবং পরে খালাস পান। খালাস পাওয়ার পর ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত মিয়ানমারের হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন। ওই বছরই তাকে মালয়েশিয়ার হাই কমিশনার করে পাঠানো হয়।
ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফিরতে আহ্বান জানান এবং পরবর্তীতে তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল করা হয়।
খায়রুজ্জামান তার জীবনের ঝুঁকি অনুমান করে তিনি কুয়ালালামপুরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কাছে যান এবং মালয়েশিয়ায় তার অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি পরিচয়পত্র পান।
এরপর থেকে মালয়েশিয়ায় খায়রুজ্জামান এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করে আসছেন।