কথার লড়াইয়ে রীতিমত তুলকালাম কাণ্ড বেঁধেছে জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও মোহাম্মদ আশরাফুলের মধ্যে। আশরাফুলকে নান্নু ‘দেশদ্রোহী ও ফিক্সার’ আখ্যা দেওয়ার পর আশরাফুল দীর্ঘ এক ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আশরাফুল বলেছিলেন, ক্রিকেট দলের নির্বাচক প্যানেলের সদস্যদের কাজের মেয়াদ ৩ থেকে ৪ বছর হলে ভালো হয়। কারণ দীর্ঘমেয়াদী নির্বাচক প্যানেল দিয়ে ক্রিকেটে সুফল ফেরানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, নির্বাচক প্যানেলে যারা আছেন তাদের প্রতিভার সুফল কিন্তু ৩-৪ বছরেই আমরা পেয়ে যাব। কিন্তু একই ব্যক্তি যদি একই কাজ ১১ বছর ধরে করতে থাকেন তবে আমরা এক জায়গাতেই আটকে যাব। নির্বাচক প্যানেলের মেয়াদ তাই ৩-৪ বছর হওয়া উচিত।
এই বিষয়ে নান্নুর কাছে জানতে চাইলে একই টেলিভিশনের এক লাইভ অনুষ্ঠানে আশরাফুলকে ‘দেশদ্রোহী ও ফিক্সার’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, যেসব খেলোয়াড় দেশদ্রোহী হয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে সাসপেন্ড হয়, তাদের কাছ থেকে ভালো কোনো পরামর্শ আশা করা যায় না।
কড়া ভাষায় নান্নু আরও বলেন, ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক কতদিন দায়িত্বে ছিলেন সে সম্পর্কে বোধহয় আশরাফুলের কোনো ধারণা নেই। উনি প্রায় ৯ থেকে ১২ বছর একটানা কাজ করেছেন। তাতে কি অস্ট্রেলিয়া অনেক পিছিয়ে গেছে? সেখানে আশরাফুল শুধু বলছে বিশ্বকাপ থেকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত থাকবে নির্বাচকরা। তাহলে বাংলাদেশ কি শুধু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে নাকি ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ খেলবে? নাকি টেস্ট ক্রিকেট খেলবে? তাহলে কি টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে এবং টেস্টের জন্য আলাদা নির্বাচক থাকবে? যে ক্রিকেটার দেশদ্রোহী হয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে সাসপেন্ড হয়, তাদের কাছ থেকে ভালো কোনো পরামর্শ আশা করা যায় না।’
একই বিষয় নিয়ে গতকাল রোববার (২ জানুয়ারি) নিজের ফেসবুক লাইভে এসে আশরাফুল বলেন, ‘একটা পোস্টে যদি একজন বেশিদিন থাকে তবে তার প্রতিভাটা এক জায়গায় আটকে থাকবে। আমি কারো নাম উল্লেখ করিনি। তবে তিনি যেভাবে সবার সামনে আমাকে ‘দেশদ্রোহী’ বললেন তা খুবই দুঃখজনক। আমি যদি খারাপ কিছু বলে থাকি তাহলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন। আমি শুধু দলকে ভালো অবস্থায় নেয়ার জন্য আমি যা মনে করি তাই বলেছি। আমি কারো নাম উল্লেখ করিনি।’
এদিকে আশরাফুলের অবদান নিয়েও কথা বলেছেন নান্নু। তার জবাবে আশরাফুল লাইভে বলেন, ‘আমার অবস্থান বাংলাদেশ ক্রিকেটে কতটুকু তা আমি বলতে চাই না তা আপনারাই জানেন। আর আমি যে ভুল করেছি আর তা স্বীকার করেছি তা কয়জন করে? আমি যা করেছি তা অতীত হয়ে গেছে। আমি এখন সবকিছু নতুন করে শুরু করেছি। তবে কেন অতীতের কথা আনা হবে। আমি চেষ্টা করছি যতদিন খেলে যাচ্ছি যেন ভালোভাবে থাকতে পারি।’
উল্লেখ্য, স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে ২০১৩ সালে নিষিদ্ধ করা হয় আশরাফুলকে, যিনি তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হতেন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরা হয়নি আর, তবে আশরাফুল নিয়মিতই খেলছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।