বিজয় দিবসসহ টানা তিনদিনের সরকারি ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে সৈকত নগরী কক্সবাজারে। দেশী-বিদেশী পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সৈকত, শহরের অলিগলি ও পর্যটন স্পটগুলো। ফলে খালি নেই পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলের কোনো কক্ষ।
পর্যটকের চাপে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনগামী কোনো জাহাজেই সিট মিলছে না। সব জাহাজের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। এবার বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি হওয়ায় অনেকেই অবকাশে আসছেন কক্সবাজারে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে বিজয় দিবসের ছুটি থেকে নতুন বছরের প্রথম ১০ দিন পর্যটকের ব্যাপক ভিড় থাকে কক্সবাজারে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে এত বেশি পর্যটক কক্সবাজারে আসতে পারেননি।
এদিকে বিজয় দিবসের ছুটিতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় সামলাতে যেমন হোটেল কর্তৃপক্ষের হিমশিম খেতে হচ্ছে, তেমনি পর্যটক হয়রানির অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। পর্যটকদের অভিযোগ, বরাবরের মতো হোটেল ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ-তিন গুণ হারে কক্ষ ভাড়া নিচ্ছেন। আবার খাবার হোটেলেও চড়া দাম নেয়া হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত ঠকছেন পর্যটকরা।
খবর নিয়ে জানা গেছে, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেলের প্রায় সব কক্ষ কয়েক ভাগে আগাম বুকিং হয়ে গেছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শেষে ছুটির দিনগুলোতে অবকাশ যাপনের জন্য হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে বেশি পর্যটকের আগমন ঘটে কক্সবাজারে।
কক্সবাজার সমুদ্রসেকত ছাড়া সেন্ট মার্টিন, মহেশখালী, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর, সোনাদিয়া, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন এলাকায় বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগমে আবারো সুদিন ফিরেছে জেলার পর্যটন খাতে। কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধমন্দির ও রামুর বৌদ্ধমন্দিরেও পর্যটক আনাগোনা প্রচুর।
গতকাল বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সমুদ্রসৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে লাখো পর্যটকের ঢল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। গতকাল বিকাল ৪টায় পর্যটন গলফ মাঠে এ মেলা উদ্বোধন করা হয়। ফলে চারদিকে কেবল মানুষ আর মানুষ।
টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটের পর্যটকবাহী আটটি জাহাজের টিকিটও শেষ। বিজয় দিবসের ছুটিতে অবকাশ যাপনের জন্য ভ্রমণপিপাসু হাজার হাজার মানুষ আসছে।
হোটেল মালিকরা জানান, বৃহস্পতিবার বিজয় দিবসের ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিন সরকারি ছুটি। বুধবারই অফিস-আদালত শেষ হয়েছে। এ কারণে বিকাল থেকেই সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। তবে আজ সকাল থেকেই কক্সবাজারে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় হবে বলে মনে করেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।
সেন্ট মার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেস কক্সবাজার অফিস ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ ছিদ্দিকী বলেন, ‘আগামী ৩১ ডিসেম্বর (থার্টিফার্স্ট নাইট) পর্যন্ত তাদের জাহাজে টিকিট সংকট রয়েছে। এখন প্রতিদিন পর্যটকরা টিকিটের জন্য ভিড় করছেন। আমরা কাউকে টিকিট দিতে পারছি না।’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্ট হাউজ ও কটেজ পর্যটকে ভরে গেছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস ভরপুর থাকবে পর্যটকে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানান, বিজয় দিবসের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে কক্সবাজার সৈকতে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সবসময় তত্পর রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, লাখো পর্যটকের ভিড়ে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসনের সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির পর্যটন সেলের সদস্যরাও ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে দায়িত্ব পালন করবেন।