চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের জোহরপুর গ্রামের ওই স্থানে এক সময় পাগলা নদীর উপশাখা বহমান ছিল। সেই নদী এখন আর নেই। ছোট খাল আছে কেবল সাক্ষী হিসেবে। বর্ষায় পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাশয়ের। কিন্তু সেটিও এখন শুকিয়ে গেছে। দুই পাড়ে অসংখ্য ঘর বাড়ি তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোনো ভূমিকম্প কিংবা প্রলয় ছাড়াই গ্রামটির ৩১টি বসতঘর হঠাৎ দেবে যায়। বেশকিছু বাড়ির মাঝামাঝি স্থানে দেখা দিয়েছে বিশাল ফাটল। ১১টি পাকা ঘর বিলীন হয়ে গেছে মাটির নিচে। অনেক ঘর আছে হুমকির মুখে। তাই অনেক পরিবার আগে থেকেই নিরাপদ দূরত্বে সরে যাচ্ছে। তারা বাস করছেন অন্যের বাড়ি কিংবা খোলা আকাশের নিচে।
জোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা সুন্দরী রানীর স্বামী তপন হলদার স্বর্ণকারের কাজ করেন। দুই সন্তান নিয়ে বাড়িতে সুখেই ছিলেন তারা। গত ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তার শান্তিমাখা ঘরটি কোনো প্রলয় ছাড়াই ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। সব হারিয়ে এখন তারা আশ্রয় নিয়েছেন পাশের মন্দিরে। ডাবলু, দয়াল হালদার, নজরুল, জাহাদুর ও রশিদসহ অনেকে জানান, তাদের কেউ কেউ ঘর থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে আসেন। সব হারিয়ে এখন তারা আছেন খোলা আকাশের নিচে। আবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্তরা অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার স্থান না পেয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নিজের ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িতেই। কিন্তু এমন কেন হলো তার অনুসন্ধান জরুরি বলে গ্রামবাসীরা মনে করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ উদ্দিন জানান, ধারণা করা হচ্ছে ভূমিকম্পজনিত কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ধরন দেখে তাই মনে হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে মাটি পরীক্ষায় একটি দল আসবে। তিনি আরও জানান, কানসাটের পাগলা নদী হয়ে ভোলাহাট পর্যন্ত এ খালটি গেছে। সেটি খনন করা হয় ৩০ বছর আগে। তাই শুষ্ক মৌসুমে আর পানি থাকে না।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল জানান, উপজেলা প্রশাসনকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বী জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলোর মাঝে এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে শুকনো খাবার ও কম্বল।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ৩১টি পরিবারকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’। সংগঠনটির উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে চাল, ডাল, তেল ও আটাসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সংগঠনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কুনাল মুখার্জী, পঙ্গু হাসপাতালের সাবেক যুগ্ম মহাপরিচালক ডা. তরিৎ কুমার সাহা প্রমুখ।