দক্ষিণ আফ্রিকায় দুঃস্বপ্নের সফর চলছে বাংলাদেশের। টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজেও জেগেছে হোয়াইটওয়াশের শঙ্কা। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ ২-০তে হেরে এমনিতেই আত্মবিশ্বাস তলানিতে মাশরাফি মর্তুজাদের। তার ওপর বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইনজুরি। চোটের কারণে সিরিজ থেকে ছিটকে পড়েছেন তামিম ইকবাল ও মুস্তাফিজুর রহমান। এমন পরিস্থিতিতে আজ অধিনায়ক হিসেবে হাফ সেঞ্চুরির মাইলফলক পূর্ণ করতে যাচ্ছেন মাশরাফি। ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটিতে হারলে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবতে হবে বাংলাদেশকে।
হাবিবুল বাশার ও সাকিব আল হাসানের পর তৃতীয় বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবে ৫০তম ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেয়ার মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছেন মাশরাফি। এর আগে অধিনায়ক হিসেবে নিজের ৫০তম ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে হারেনি টাইগাররা। অধিনায়ক হিসেবে ৫০তম ম্যাচ খেলতে নেমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পেয়েছিলেন বাশার। তবে সাকিব জয় না পেলেও বাংলাদেশ হারেনি। বৃষ্টির কারণে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়।
মাইলফলকের ম্যাচে আজ মাশরাফির নেতৃত্বে বড় কিছুর অপেক্ষায় আছেন সাবেক অধিনায়ক বাশার। তবে এজন্য সবাইকে মাঠে নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিতে হবে বলে জানান তিনি, ‘এটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার। মাইলফলকের ম্যাচগুলো আমাদের পক্ষেই যায়। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় জিততে হলে সেরাটা খেলতে হবে।’
প্রথম দুই ম্যাচে বড় হারের পর তৃতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে বলে জানান সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক নিল ম্যাকেঞ্জি। দীর্ঘ নয় বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেছে বাংলাদেশ।
মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহ ও ইমরুল ছাড়া বর্তমান দলের আর কারোর দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তাই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিয়মিত ‘এ’ দল, একাডেমি ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে পাঠানোর পরামর্শ দিলেন ম্যাকেঞ্জি, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে সহজাত খেলাটা বেশ কঠিন। উপমহাদেশের সব দলই এখানে এসে বাড়তি গতি ও বাউন্সের জন্য সংগ্রাম করে। বাংলাদেশের অনেক তরুণ ব্যাটসম্যান রয়েছে। আমার মনে হয় না, ওরা অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকায় যথেষ্ট সফর করেছে। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এখানে বারবার সফর করতে হবে। বেশি বেশি সফর করতে পারলে এখানে মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হবে না।’
ম্যাকেঞ্জির মতো বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন আরেক সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক কেপলার ওয়েসেলস। তার মতে, দলকে ভালো সংগ্রহ এনে দিতে ব্যাটসম্যানদের এক-দুই নিয়ে রানের চাকা সচল রাখার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। প্রথম দুই ওয়ানডেতে সাবধানী ব্যাটিংয়ে নেমে প্রচুর ডট দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ওয়েসেলসের ভাষায়, ‘বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের শটের অভাব নেই। ওরা প্রচুর শট খেলতে পারে। প্রায় সবাই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। তার পরও দলের সংগ্রহ বড় না হওয়ার কারণ হলো, ওরা অনেক ডট বল খেলে। বাউন্ডারি অন্য যেকোনো দলের মতোই হাঁকাতে পারে। তবে সিঙ্গেলস-ডাবলস নিতে না পারায় তারা পিছিয়ে।’
প্রথম দুই ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। শেষ ওয়ানডেতে ভালো পারফরম্যান্স হতে পারে টি২০ সিরিজে ভালো করার অনুপ্রেরণা। কিন্তু বাফেলো পার্কের শেষ ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কি মাশরাফিরা— বড় হয়ে উঠেছে এ প্রশ্নটিই। এমনিতে ইনজুরিজর্জর দল। কম্বিনেশন দাঁড় করানো যায়নি। বোলাররা এত দিনেও দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে ধাতস্থ হতে পারেননি। হারলেই হোয়াইটওয়াশ। ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিলেন মাশরাফিরা। সেই সুখস্মৃতি কি ফিরিয়ে আনতে পারবে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, ২২ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস