হঠাৎ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু মুক্তামনি। এমনিতেই তার রক্তনালীতে টিউমার তার উপর আবার সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন শনিবার (২১ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, অনেক কারণে মুক্তামনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। তার কফসহ কয়েকটি পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার প্রতিবেদন আসলে নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কিনা। এমনিতে মুক্তামনির অবস্থা ভালো।
ডাক্তার সামন্ত লাল সেন জানান, গত বৃহস্পতিবার তার হাতে নতুন চামড়া লাগানোর পর প্রথম ড্রেসিং করা হয়। এরপর তাকে কেবিনে রাখা হয়। বর্তমানে তাকে ঢামেক বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা মুক্তামনির অস্ত্রোপচারে করেন ঢামেক হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের চিকিৎসকরা মুক্তামনির পা থেকে চামড়া নিয়ে তার হাতে প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রথম ধাপে প্রায় ৫০ শতাংশ চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
এরআগে রোববার (০৮ অক্টোবর) চতুর্থ দফা অস্ত্রোপচারে মুক্তামনির হাত নতুন চামড়া লাগানোর উপযোগী করা হয়েছে। এটি তার সুস্থ হওয়ার প্রথম ধাপ বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
গত ১২ আগস্ট প্রথম দফায় মুক্তামনির ডান হাত অক্ষত রেখেই দু’ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ও মুক্তামনির চিকিৎসায় গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. সামন্ত লাল সেন তখন জানিয়েছিলেন, তিন কেজির মতো বাড়তি মাংস অপসারণ করা হয়েছে। টিউমার অপসারণে ফের কয়েকদফা অস্ত্রোপচার করতে হবে।
এরপর গত ২৯ আগস্ট দ্বিতীয় দফার অস্ত্রোপচার শুরু হলেও জ্বর আসায় তা বন্ধ রাখা হয়। গত ০৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফার অস্ত্রোপচারও সফল হয়।
গত ২৭ জুলাই ভিডিও কনফারেন্সে মুক্তামনিকে ও তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন দেখেন এবং ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকদের সঙ্গে বোর্ড মিটিং করেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা।
পরে ই-মেইলে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালটি জানিয়েছিলো, ‘রোগটি চিকিৎসাধীন মুক্তামনি ভালো হওয়ার নয় ও সেটি অস্ত্রোপচার করার মতোও নয়’।
এ পর্যবেক্ষণ জানার পর গত ০২ আগস্ট ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে বায়োপসি করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। সে অনুসারে গত ০৫ আগস্ট সফলভাবে মুক্তামনির বায়োপসি অপারেশন সম্পন্ন হয়।
বায়োপসি রিপোর্টে চিকিৎসকরা জানতে পারেন, রক্তনালীতে টিউমার বা ‘হেমানজিওমা’ রোগে আক্রান্ত শিশুটি। পরে ডান হাতটি কেটে ফেলার ঝুঁকি থাকলেও সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন মেডিকেল বোর্ড।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন ও আসমা খাতুন দম্পতির মেয়ে মুক্তামনির ডান হাতে প্রথমে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তার হাতটি ফুলে অনেকটা কোলবালিশের মতো হয়ে যায়! এক পর্যায়ে হাতে পচন ধরে। সাদা রঙের শত শত পোকা ঘুরে বেড়াতে থাকে সেই ফুলে যাওয়া অংশে। শরীরের অসহ্য ব্যথা ও যন্ত্রণায় মুক্তামনি বসতেও পারতো না। হাতের সঙ্গে বুকের একাংশেও ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। দীর্ঘ নয় বছরেও মুক্তার রোগ ধরতে পারেননি চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ সময় : ১৫৪০ ঘণ্টা, ২১ অক্টোবর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ