নিজেকে পরবর্তী বুদ্ধ দাবি করে ‘খুন তান’। আর এমন দাবি করে যুবতীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে সে। কয়েক শত কিশোরীর কুমারিত্ব নষ্ট করেছে সে। বিনিময়ে তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে এমন ধারণা দেয়া হয়েছে। অভিভাবকরাও রীতি অনুযায়ী তাতে অনুমোদন দিয়েছেন। এ অভিযোগে মিয়ানমারের মন রাজ্য সরকার খুন তানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
এ কথা বলেছেন মন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. আয়ে জান। তিনি অনলাইন দ্য ইরাবতীকে বলেছেন, বৌদ্ধ ধর্মের অবমাননা করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছি আমরা। তবে খুন তান পালিয়ে গেছে। আমরা তার পাঁচ সহযোগিকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। দ্য ইরাবতীর রিপোর্টে আরো বলা হয়, জাত লিটে নামেও পরিচিত খুন তান। মনে করা হচ্ছে তিনি শান রাজ্যের তাঙ্গি জেলার হোপোং এলাকায় পালিয়ে গেছে। তাকে গ্রেপ্তারে শান রাজ্য সরকারকে সহযোগিতা করছে মন রাজ্য সরকার।
মন রাজ্যের থাটনের অধিবাসী কো খুন অং মাইও থেইন বলেছেন, কুন তানের জন্ম হোপোং-এর কোন থা গ্রামে। সাত বছর বয়সের সময় তিনি থাটনে চলে যান ১৮ বছর আগে। তিনি স্থানীয় পা-ও জনগোষ্ঠীর সদস্য। বিশ্বাস করা হয়, পা-ও জাতিগোষ্ঠীর ভিক্ষু আলানতিয়া সায়াড অশিন সাক্কার হিসেবে তার মাধ্যমে পুনর্জন্ম হয়েছে। আলানতিয়া সায়াড অশিন সাক্কার’কে শুধু পা-ও জনগোষ্ঠীর বৌদ্ধরাই সম্মান করেন এমন না। সারা মিয়ানমার তাকে শ্রদ্ধা করে।
তবে এ বিষয়ে কো খুন অং মাইও থেইন বলেন, আমি যতদূর জানি খুন তান তো ভালভাবে বার্মিজ ভাষাই বলতে পারে না। আমার মতে নিজেকে আলানতিয়া সায়াড অশিন সাক্কার হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন না। তবে ভুল খবর প্রচার করে দিচ্ছে কিনা তা জানি না। আলানতায়া এলাকার পা-ও সম্প্রদায়ের অভিভাবকদের খুন তান আশ্বস্ত করেছেন যে, তাদের মেয়েরা যখন পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হবে তখন যদি তারা তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে তারা আশীর্বাদপুষ্ট হবে। মন রাজ্য সরকারের পা-ও সম্প্রদায় বিষয়ক মন্ত্রী সান উইন্ট খাইং বলেছেন, এমন ঘটনার শুরু ২০১২ সাল থেকে। এরই মধ্যে খুন তান কয়েক শত মেয়েকে শয্যাসঙ্গী করেছে। এসব মেয়ের বেশির ভাগেরই বয়স ১৫ বছরের কাছাকাছি।
কো খুন অং মাইও থেইন বলেন, পা-ও সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে। তাহলো, যদি ভাগ্যরেখা বা ভাগ্যগণনায় কারো ভবিষ্যত অশুভ দেখা যায় তাহলে তারা তা এড়াতে পারে একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে। সেটা হলো, এমন একজন ব্যক্তিকে বিয়ে করতে হবে যার ভবিষ্যত উজ্জল। এটা একান্তই একটি রীতি। এ ধরণের বিয়ে নামমাত্র। এ রকম বিয়ে হলেই বর-কনেকে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতে হবে এমন নয়। কিন্তু খুন তানের বিরুদ্ধে যুবতী মেয়েদের শয্যাসঙ্গী করার জন্য তাদের কুমারিত্ব দাবির যে অভিযোগ প্রকাশ পাচ্ছে মিডিয়ায় সে বিষয়ে আপত্তি আছে কো খুন অং মাইও থেইনের। তিনি বলেন, খুন তান এমনটি করেছেন কিনা, কোনো কুমারির সঙ্গে শয্যা গ্রহণ করেছেন কিনা সে বিষয়ে তিনি কোনোই মন্তব্য করবেন না।
ড. আয়ে জান বলেছেন, দু’মাস ধরে খুন তানের ওপর নজর রাখছিল তার সরকার। তার বিরুদ্ধে অপরাধের রেকর্ডও আছে। কিন্তু কেউ মামলা না করায় তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায় নি। এমন অভিযোগ যুবতীদের কাছ থেকে আসতে হয়। কিন্তু তারা তো এমন অভিযোগ করে নি। তাই আমাদের সরকার এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে জটিলতার মুখোমুখি ছিল। তবে ২রা অক্টোবর মন রাজ্য পার্লামেন্টের নারী ও শিশু অধিকার রক্ষা কমিটির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ আসে।
তাতে বলা হয়, খুন তান পাঁচজন কিশোরীকে যৌন সঙ্গী করেছে। এদের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। আশপাশের গ্রামের তিনজনকে প্রলুব্ধ করেছে তাকে বিয়ে করতে। সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, স্থানীয়রা খুব কম শিক্ষিত। তারা বিশ্বাস করে যে, খুন তানই হয়তো প্রকৃত বুদ্ধ হতে যাচ্ছে। তাই তার কাছে তাদের কিশোরী মেয়েদের কুমারিত্ব বিলিয়ে দিলে তাদের কপাল খুলে যাবে। কিন্তু এর পিছনে রয়েছে অন্য কারণ। খুন তান ওই সব কিশোরীকে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার জন্য অর্থ পরিশোধ করেছে না হয় তাদেরকে হুমকি দিয়েছে। ওদিকে থাটন জেলার জেনারেল প্রশাসনিক ডিপার্টমেন্ট এরই মধ্যে জায়িত চাউং গ্রামের এডমিনিস্ট্রেটরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে খুন তানের দুটি ধর্ষণের ঘটনা কেন থামাচাপা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৫৩০ ঘণ্টা, ২১ অক্টোবর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি