কুড়িগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশনের সংযোগ সড়কের কাজ চলছিল নিম্নমানের ইরানি বিটুমিন দিয়ে। এতে জোর আপত্তি তুলে তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক কাজ বন্ধ করে দেন।
এ কারণে ওই প্রকৌশলীকে বদলির হুমকি দিয়েছেন অভিযুক্ত ঠিকাদার।
রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগা কুড়িগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশনে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নানা কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। কুড়িগ্রাম থেকে আন্তনগর ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় স্টেশন এলাকায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ৩০০ ফুট আধুনিক প্লাটফর্ম নির্মাণ করা হয়।
সেইসঙ্গে যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশের জন্য আর কে রোড থেকে জরাজীর্ণ সংযোগ সড়কটিও মেরামতের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সড়কটি মেরামতসহ সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ফুটপাত, ড্রেন, ডিভাইডার ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সড়কের দুইপাশে ড্রেন, কংক্রিট ফুটপাত, ডিভাইডার এবং কার্পেটিংসহ সব কাজ প্রায় শেষের দিকে। শুধু গ্রিল ও সিলকোটের ফিনিশিং বাকি ছিল। এখন নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে কাজ করায় স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে বন্ধ হয়ে গেছে শেষ পর্যায়ের সিলকোটের ফিনিশিং কাজ।
কুড়িগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিম্নমানের ৮০-১০০ গ্রেডের ইরানি বিটুমিন এনে ঠিকাদার সিলকোটের কাজ করার প্রস্তুতি নিলে রেলওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর নজরে আসে। স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে সড়কের কাজ করা যাবে না বলে সরাসরি ঠিকাদারকে জানিয়ে দেন রেলওয়ের ওই প্রকৌশলী।
এতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার চড়াও হয়ে প্রকৌশলীর সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু করলে স্থানীয় জনতা এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। অবস্থা বেগতিক দেখে ঠিকাদারের লোকজন রেলওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীকে বদলি করাসহ নানা ধরনের হুমকি দেন। এসময় স্থানীয়দের বাধার মুখে নিম্মমানের বিটুমিন সরিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন ঠিকাদার।
কুড়িগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশনের সংযোগ সড়কের কাজ দিনাজপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আল আমিন ট্রেডার্স’-এর নামে হলেও এর মূল ঠিকাদার গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জের জহুরুল হক।
ঠিকাদার জহুরুল হক জানান, শিডিউলে ৬০-৭০ গ্রেড অথবা ৮০-১০০ গ্রেডের কথা উল্লেখ আছে। সেজন্য আমরা ৮০-১০০ গ্রেডের ইরানি বিটুমিন নিয়ে এসেছি। বাজারে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক জানান, চলমান বাজারে যদি ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে কাজ চলমান রাখার স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিকল্প পথ রাখে। কিন্তু এই মুহূর্তে বাজারে উন্নতমানের ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিনের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। এরপরও ঠিকাদার জোর করে নিম্নমানের ইরানি বিটুমিন দিয়ে কাজ করাতে চাওয়ায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম স্টেশন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উন্নতমানের বিটুমিন না পাওয়ার যে দাবি তুলেছে তা সঠিক নয়। বাজারে এখন উন্নতমানের বিটুমিনের সরবরাহ ভালো। আমরা শুনেছি দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান উন্নতমানের বিটুমিন তৈরি করছে এবং পর্যাপ্ত সরবরাহও রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভেজাল নিম্মমানের বিটুমিন ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারি করতে চেয়েছে।
কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকার বাসিন্দা আলতাফ হোসেন, নূর আলম, রফিকুল ইসলামসহ আরো অনেকে জানান, সরকার গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সড়কে ভেজাল বিটুমিন দিয়ে কাজ করায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। ভেজাল বিটুমিনে কাজ করলে সড়ক টেকসই হয় না, তা অল্পদিনেই ভেঙে যায়। তাই দেশেই উৎপাদিত উন্নতমানের বিটুমিন দিয়ে যেন সড়কের কাজ করা হয়।
তারা আরো জানান, কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকৌশলী শিডিউল অনুযায়ী ভালমানের কাজ করানোয় ঠিকাদাররা সুবিধা আদায় করতে পারছে না। তাই হুমকি ধামকি নিয়ে প্রকৌশলীকে বদলির চেষ্টা করছেন।
পশ্চিমাঞ্চলীয় লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, নিয়মমাফিক শিডিউল অনুয়ায়ী কাজ চলবে। ঠিকাদারের ১৮০ দিন অতিবাহিত হয়েছে এটা ঠিক। তবে ওনারা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন এবং সেটি ডিজি মহোদয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া ঠিকাদারকে বাকি কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।