বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমানে ৪৬৭টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে। যার মধ্যে ১৭৬টির আয়ুষ্কাল এরইমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে। রেলওয়ে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী আগামী ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সব রেলওয়ে ট্র্যাক ব্রডগেজ রূপান্তর করা হবে। আগামী ২ থেকে ৪ বছরের মধ্যে আরও ৪০০টি যাত্রীবাহী কোচ প্রয়োজন হবে। এ জন্য প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ২০০টি রেলকোচ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
প্রকল্পের আওতায় ৫৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি কোচ সম্বলিত এক সেট প্রেসিডেন্ট স্যালুন কোচও কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে প্রতিটি কোচের গড়মূল্য ১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সঙ্গে আলোচনা করেই নিরাপত্তা সরঞ্জাম দিয়ে কোচ তৈরির প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বাংলানিউজকে বলেন, রেলপথে ভ্রমণ নিরাপদ ও আরামদায়ক। বর্তমান সরকার রেলপথের উন্নয়নে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে রেলপথে জনবান্ধব হওয়ায় যাত্রী সংখ্যা বাড়বে। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দিন দিন কোচের চাহিদাও বাড়ছে। পদ্মাসেতু হয়ে গেলে রেলকোচের চাহিদা বাড়বে। এসব কথা মাথায় রেখেই ২০০টি আধুনিক কোচ কেনা হবে।
তিনি বলেন, এক সেট প্রেসিডেন্ট স্যালুন কোচও থাকবে। নিরাপক্তার সব বিষয় বিবেচনা করেই এটা কেনা হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহায়তায় যমুনা নদীর উপর রেলসেতু তৈরি হলে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে রেল সংযোগ তৈরি হবে। তা ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনেও প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। পুরাতন কোচগুলোর প্রতিস্থাপনের জন্য বাড়তি কোচ প্রয়োজন।
‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০০টি ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৭৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩৯৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। প্রকল্প ঋণ হিসেবে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) দেবে ১ হাজার ৩৯৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ২০০টি কোচ কেনাসহ এসব ব্রডগেজ কোচের ক্যাপিটাল অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স স্পেয়ার্স সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ, ডেস্কটপ, কম্পিউটার চার সেট, দু’টি ল্যাপটপ, দু’টি ফটোকপিয়ার ও বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র কেনা হবে।
প্রকল্পটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে জানুয়ারি ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত অর্থাৎ ৪ বছর। প্রকল্পের প্রথম ২ বছরে ৪৪০ কোটি, তৃতীয় বছরে ৮৫৯ কোটি এবং চতুর্থ বছরে ৪৩৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের এক প্রতিনিধি বলেন, প্রথম বছরে স্পেসিফিকেশন তৈরি, দরপত্র আহ্বানসহ আনুষঙ্গিক কাজ করার জন্য এবং পরবর্তী বছরগুলোতে প্রাপ্য ক্যারেজের সংখ্যা অনুযায়ী বরাদ্দ চাহিদার প্রস্তাব করা হয়েছে। চার বছর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ সালে ভারতীয় ঋণচুক্তির (এলওসি) আওতায় ১২০ টি ব্রডগেজ কোচ কেনা হয়। এ ব্যয়ের সঙ্গে ৩ শতাংশ স্ফীতি ধরে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এছাড়া কোচগুলো বাস্তবতার নিরিখে নতুন নতুন ও উন্নত সুবিধাদি সংযোজন করার প্রস্তাব রয়েছে। অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজন অনুযায়ী ২০০ টি ক্যারেজের মূল্য ১ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রতিটি কোচের গড়মূল্য ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। স্পেয়ার পার্টসসহ এর দর ৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং মোট প্রকল্প ব্যয় অনুযায়ী এ দর ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা অত্যাধিক বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে সাধারণত পূর্ববর্তী অনুমোদিত প্রকল্পে কোচের দরের ওপর ভিত্তি করে নতুন কোচের জন্য দর নির্ধারণ করা হয়। সময়ে সময়ে এগুলোর স্পেসিফিকেশনও পরিবর্তিত হয়। তাই ‘সিঙ্গেল স্টেজ টু ইনভেলাপ’ পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে নতুন কোচ কেনা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশন জানায়, আমাদের দেশে সাধারণত ইন্দোনেশিয়া, ভারত বা চীন থেকে কোচ কেনা হয়। এক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে দর সংগ্রহ করা সম্ভব। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিনিধিও একই মত ব্যক্ত করেন।
এ পর্যায়ে শুধু পূর্বের কেনা দরের ওপর ভিত্তি করে নতুন ক্যারেজের দর নির্ধারণ করা যাবে। বাজারে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়েবসাইট/সরাসরি মাধ্যমে আনুমানিক দর সংগ্রহ করে বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি দায়িত্বশীল কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা করে দর নির্ধারণ করতে হবে। দর বিশ্লেষণের ভিত্তি যুক্তিসঙ্গত মর্মে প্রতীয়মান না হলে প্রকল্পটির ওপর পুনরায় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা হবে।