অমর একুশে বই মেলাঃ প্রথম দশ দিনে ১ হাজার ২৫৯ নতুন বই

স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী অমর একুশে বই মেলার প্রথম দশ দিনে মেলায় এসেছে নতুন এক হাজার ২৫৯টি বই। এদের মধ্যে কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে সব থেকে বেশি।

শনিবার (২৭ মার্চ) পর্যন্ত মেলায় নতুন কবিতার বই এসেছে ৪০৮টি। উপন্যাস প্রকাশ পেয়েছে ২১৩টি। গল্পের বই ১৫০টি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই প্রকাশ হয়েছে ৫৩টি। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বইমেলায় নতুন বইয়ের প্রকাশ বেশি হচ্ছে বলেই মন্তব্য প্রকাশকদের।

এদিকে শনিবার মেলার দশম দিনে মেলা প্রাঙ্গন ছিল বেশ ফুরফুরে। তবে ছুটির দিন হিসেবে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। সেদিক থেকে গতকালের তুলনায় বিক্রিও অনেক কম বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা।

নতুন বই: শনিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১৭৫টি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে- আগামী প্রকাশনী এনেছে হাসনাত আবদুল হাই ও সিরাজুল ইসলাম মুনির সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু শতবর্ষে শতগল্প’, আবদুল গাফফার চৌধুরী, মোনায়েম সরকার ও সৈয়দ জাহিদ হাসান সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শত প্রবন্ধ’, ময়ূরপঙ্খি এনেছে মঞ্জু সরকারের ‘দাদুর হাতে জাদুর লাঠি’, কথাপ্রকাশ এনেছে মুস্তাফিজ শফি সম্পাদিত ‘ভাষণ অথবা একটি কবিতার গল্প’, হাওলাদার প্রকাশনী এনেছে জিয়া হাশানের ‘সময়ের দূতাবাস’, পাঞ্জেরী পাবলিকশেন্স এনেছে মোজাফফর হোসেনের ‘মানুষের মাংসের রেস্তোরা’, শিমু গ্রন্থকুটির এনেছে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ‘তিলে নেত্র চারে বেদ’, পাঠক সমাবেশ এনেছে হরিশংকর জলদাসের ‘প্রান্তজনের গল্প’, মূর্ধণ্য থেকে ভূপেন হাজারিকার ‘আমি এক যাযাবর’, সরকার আমিনের ‘মৃদু বেদনার হাসপাতালে’, বিভাস এনেছে খালেক বিন জয়েনউদদীন সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু এবং রক্তাক্ত বাংলা-২’, সমগ্র প্রকাশন এনেছে ইমতিয়ার শামীমের ‘ডানাকাটা হিমের ভেতর’ প্রভৃতি।

মূল মঞ্চের আয়োজন: বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় \’স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি\’। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জালাল ফিরোজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাব্বির আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন মো. মইনুল কবির।

প্রাবন্ধিক ড. জালাল ফিরোজ বলেন, বাংলাশে সংবিধানের মূলনীতি কী হবে তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ই এপ্রিল গণপরিষদে দেওয়া তার ভাষণে উল্লেখ করেন। তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও অভিজ্ঞতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের মানুষের চেতনাজগতে যে পরিবর্তন ঘটে তা প্রতিফলিত হয় সংবিধানের মূলনীতিতে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর তার আদর্শের মর্মমূলে আঘাত করার জন্য সংবিধানের মূলনীতিতে প্রথম আঘাত করা হয়। কিন্তু দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি, বুদ্ধিজীবী সমাজ এবং অগ্রসর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র-সংগঠনগুলো এর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের মূলনীতিসমূহ সংবিধানে ফিরিয়ে আনা হয়।

আলোচক সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা জানি সংবিধান একটি জাতির আত্মজীবনীস্বরূপ। একটি রাষ্ট্রের ভেতরকার ক্ষমতার সম্পর্ক কেমন হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকে সংবিধানে। আমাদের সংবিধানের মূলনীতিগুলো আকস্মিক কোনো বিষয় ছিলো না। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই বাংলার মানুষের জন্য যে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগঠনের সংগ্রাম করেছেন, তার পরিণতি ছিল ১৯৭২-এর সংবিধান। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন পর্বের প্রতিক্রিয়াশীল শাসনকালে ৭২-এর সংবিধানের পরিবর্তন সংযোজন ও বিয়োজন করা হয়। তবে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২-এর সংবিধানে প্রত্যাবর্তন আমাদের একটি বড়ো অর্জন।

সভাপতির বক্তব্যে মো. মইনুল কবির বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র অভ্যুদয়ের খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান পেয়েছি। বাংলাদেশের সংবিধানে জনগণের পরম অভিপ্রায়ের প্রকাশকে মূল্য দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিৎ সংবিধানের মূলনীতিসমূহ ও অন্য সকল মহান আদর্শের বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা।

এদিন বই মেলার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন সাইম রানা, আহমাদ মোস্তফা কামাল এবং সাইফুল ভূঁইয়া।

Scroll to Top