পিতৃহারা কন্যা শেখ হাসিনা, পিতার স্বপ্ন পূরণে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। যে বুলেট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সবাইকে পৃথিবীছাড়া করেছিলো, সেই বুলেটই শেখ হাসিনার পিছু নেয় দেশের মাটিতে পা রাখার পর থেকেই। বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপর প্রথম আক্রমণ হয় ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। ওইদিন চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের খুব কাছে আটদলীয় জোটের মিছিলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পুলিশ ও বিডিআর গুলি ছোড়ে।
পরের বছর ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট শেখ হাসিনা বাড়িতে থাকা অবস্থায় বুলেট-গ্রেনেড ছোঁড়া হয় ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে। এ যাত্রাতেও ব্যর্থ হয় হামলাকারীরা। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উপ-নির্বাচনে ভোট দেয়ার পর কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে, গাড়ি থেকে নামার পরপরই তার ওপর গুলি চালিয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
১৯৯৪ সালে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে রাজনৈতিক সফরে গেলে ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেলস্টেশনে তার ওপর আবারো হামলা হয়। গুলি ছোঁড়া হয় তার সমাবেশে। ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর রাসেল স্কয়ারে এবং ১৯৯৬ একই কায়দায় তার ওপর হামলা চালানো হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে।
নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়াতেও ভয়াবহ হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ২০০০ সালে জনসভাস্থল ও হ্যালিপ্যাডে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ-হুজি। পরের বছরই আবারো সক্রিয় হয় হুজি। ২০০১ সালে ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেখানেও বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিলো তাকে হত্যা করতে।
ওই বছরই ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনী প্রচারে সিলেটে গেলে, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভার মঞ্চের পাশেই ঘটে বোমা হামলা। ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা চালান হয়।
ওই বছরই ২৯ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে যশোর ফেরার পথে বিএনপি অফিসের সামনে বাস রেখে ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা হলেও রক্ষা পান তিনি। ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করে ঘাতক চক্র। চেষ্টা করা হয়েছে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গি দিয়ে মানববোমায় তাকে হত্যার।
তাঁর ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাচেষ্টা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ঐ দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শান্তি সমাবেশস্থলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। অল্পের জন্য বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ঝরে যায় ২৩ নেতা-কর্মীর প্রাণ।
২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করেছিলো শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য। ২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে কাওরান বাজারে তার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জামা\’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জঙ্গিগোষ্ঠী।
২০১৬ সালের জুনে তাকে বহনকারী বিমান হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়েতে ধাতব পদার্থের উপস্থিতি থাকায় নামতে গিয়ে আবার ওপরে উঠে যায়। ধারণা করা হয়েছিল ওই বস্তুর আঘাতে ছিন্নভিন্ন হবে তার বিমান। এরপর, ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর সরকারি সফরে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে বিমানের নাট ঢিল করে রাখা হয়েছিলো তাকে হত্যার পরিকল্পনায়।
সবশেষ ২০১৭ সালেও শোকের মাসে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলো জঙ্গিরা। বারবার হামলার পরও বুলেট-বোমা আর কুটচালের শত বাধা ডিঙ্গিয়ে যিনি বাংলাদেশকে টেনে তুলছেন খাদের কিনার থেকে সমৃদ্ধির পথে।
:সময় টিভি