জনগণের প্রত্যাশিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন (নিসচা)। আজ রোববার (১ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নিসচার মহাসচিব সৈয়দ এহসান উল কামাল।
লিখিত বক্তব্যে নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, একটা কথা বলতে দ্বিধা নেই সরকার নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রয়োগে যখনই উদ্যোগ নেয় তখনই পরিবহন সেক্টরের একটি চক্র বাধা সৃষ্টি করে। তারা নতুন করে নানা ধরনের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। শুধু তাই নয়, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। এমনকি আমাকে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়। আমাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। যা সত্যিই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, আমি বলবো নতুন আইনের বিষয়ে তারা কোনোও প্রস্তুতি ইচ্ছে করেই নেয়নি এবং নিচ্ছে না। তারা শুধু দোষারোপ করে গেছে তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য। সময় থাকতে গাড়ির লাইসেন্স, ফিটনেস এবং গাড়ির আকৃতি পরিবর্তনজনিত অনিয়ম ও ত্রুটিগুলো সংশোধনে তারা মনোযোগ দেয়নি। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি যদি তারা নতুন আইন প্রয়োগের আগেই সমাধান করতো তা হলে নতুন করে আইনের কয়েকটি বিষয় ছাড়ের সময়সীমা আর বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এ আইন বাস্তবায়নে সরকারের যেসব স্টেকহোল্ডার রয়েছে সেখানেও এক ধরনের শৈথিল্য লক্ষ্য করছি। এ আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব যেমন আছে তেমনি সরকারের সেই সব মহলেরও নানা পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। বিশেষ করে এ আইনটি প্রয়োগে মাঠে সক্রিয় থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তাদের পূর্ণ প্রস্তুত করতে প্রথমেই আসে যে মেশিন দিয়ে তারা জরিমানা করে, বর্তমান আইন অনুযায়ী সেটার আপডেট করা। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া, গাড়ির লাইসেন্স, ফিটনেস এবং গাড়ির আকৃতি পরিবর্তনজনিত অনিয়ম ও লটগুলো সংশোধনে বিআরটিএকে সক্ষম ও আধুনিকায়ন করা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটার সিস্টেম আপডেট করা, জনগণকে এ আইন সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ক্যাম্পেইনের অভাব দূর করা, এ আইনে যাত্রী-পথচারীদেরও আওতায় আনা হয়েছে সেটি সবাইকে অবহিত করা, সর্বোপরি এ আইনের অস্পষ্টতা দূর করতে বিধিমালা প্রণয়ন জরুরি।
তিনি বলেন, আমি দাবি করবো এ আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে এ বিষয়গুলোর দিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। তা না হলে আমরা মনে করি, নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি যদি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা বা শৈথিল্য এবং মহল বিশেষের চাপের মুখে ব্যাহত হয় এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আমরা দুর্ঘটনামুক্ত বাংলাদেশ, দারিদ্র্য বিমোচন ও এসডিজি বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন দেখছি তা আর পূরণ হবে না।
নিসচা চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের চূড়ান্ত প্রত্যাশা দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা করা। যতদিন এটি পূরণ না হবে ততদিন আমি ও নিরাপদ সড়ক চাই এর কর্মীরা সড়কে আছি, থাকবো। আইন প্রয়োগ নিয়ে চলমান সংকট উত্তরণে আইনটির যথাযথ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদার এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত কমিটি যে ১১১টি সুপারিশ করেছে, তাতে বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ রয়েছে। পুরো সড়ক ব্যবস্থাপনা সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কেউ আইন ভঙ্গ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শঙ্কা অমূলক। যারা অন্যায় করবেন, তাদেরই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পরিবহন মালিক হোক বা শ্রমিক হোক-কারও চাপের মুখে নতি স্বীকার করা যাবে না।
নিসচা চেয়ারম্যান প্রত্যেক সেক্টরকে তাদের দুর্বলতার জায়গাগুলো সংশোধন করে সড়ক আইন প্রয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।