\’শীতে মহামারী করোনা বাড়ার আশঙ্কায় জেলা হাসপাতাল প্রস্তুত করছে সরকার\’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন যে, আগামী শীতে করোনা মহামারির প্রকোপ বাড়তে পারে। সেটা মাথায় রেখে সরকার জেলা হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে হাওরের বিস্ময় কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে একথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাস আগামী শীতকালে বাড়তে পারে সেটা মাথায় রেখে প্রত্যেকটা জেলা হাসপাতালে আইসিইউ নির্মাণ থেকে শুরু করে অক্সিজেনের ব্যবস্থাসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।

করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ২ হাজার ডাক্তার, ৩ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি, টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের কাজ করা, জনগণের কল্যাণ করা।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে কষ্টের বিষয় আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না, কলেজে যেতে পারছে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। তাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও আমরা চাচ্ছি তাদের পড়াশোনাটা যাতে চলমান থাকে।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে ডিজিটাল পদ্ধতি, টেলিভিশনে ক্লাস নেওয়াসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলার দিকেও নজর দিতে হবে। খোলা বাতাস, রোদে থাকতে হবে। করোনা ভাইরাস দূর করার জন্য এটা একান্তভাবে প্রয়োজন। আপনারা সেটা মেনে চলবেন। আপনারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলবেন যাতে এই করোনা ভাইরাসে আর কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশে একটা সড়কের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি। নৌপথগুলো সচল করার ব্যবস্থা নিয়েছি। রেলপথ সংযোগ পুনরায় স্থাপন করে এবং আরো নতুন নতুন অঞ্চলে রেললাইন সম্প্রসারণ করে রেলে যোগাযোগের সুযোগটা বাড়াচ্ছি।

তিনি বলেন, যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হবে, মানুষের পণ্য পরিবহনের সুবিধা হবে। সেখানে মানুষের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বিতা ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর হাওরের বিস্ময় ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়ক দেখতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইশ! কবে যে যাবো। এ সড়কে (দেখতে) কবে যে যাবো। আমার মনটা পড়ে থাকলো। এ সড়ক দিয়ে গাড়িতে কবে যাবো। রাষ্ট্রপতিও চান আমি যেন সরাসরি যাই। আমি যাবো। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে এ সড়ক দেখতে যাবো।

এসময় গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রান্তে ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, ডিসি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি এখন আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। এরইমধ্যে হাওরের নৈসর্গিক রূপ দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসছে মানুষ।

বর্ষায় মাইলের পর মাইল বিস্তীর্ণ জলরাশি, বর্ষা শেষে জলকাদা আর শুকনো মৌসুমে ফসলি জমি। বর্ষায় নৌকা আর অন্য ঋতুতে পায়ে হাঁটা ছাড়া চলাচলের উপায় ছিল না হাওরবাসীর। যোগাযোগে এখানকার মানুষের কষ্ট লাঘবে বিশাল হাওরের মধ্যে এ সড়ক নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন ‘ভাটির শার্দুল’ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ইচ্ছে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে কিশোরগঞ্জ জেলার তিন উপজেলার মধ্যে সারা বছর চলাচলের জন্য নির্মিত হয় হাওরের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক।

সড়কটি নির্মাণের ফলে শুধু হাওরবাসীর চলাচলের দুর্ভোগ দূর হয়েছে তা নয়, নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ৮৭৪.০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি নির্মাণ করেছে।

হাওরের বুক চিরে চলে যাওয়া ২৯.৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ অলওয়েদার সড়কে ৫৯০.৪৭ মিটার দীর্ঘ তিনটি পিসি গার্ডার, ১৯০ মিটার দীর্ঘ ৬২টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, ২৬৯.৬৮ মিটার দীর্ঘ ১১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।

এরমধ্যে ২৬১.৮১ মিটার দীর্ঘ ভাতশালা সেতু, ১৭১.৯৬৪ মিটার ঢাকী সেতু ও ১৫৬.৭২ মিটার দীর্ঘ ছিলনী সেতু সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্ষায় ভাঙন থেকে সড়ক রক্ষায় ৭.৬০ লাখ বর্গমিটার সিসি ব্লক দিয়ে স্লোপ প্রটেকশনের কাজ করা হয়েছে।

Scroll to Top