ঢাকা উত্তরের একটি প্রকল্পে ৫টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তি পরামর্শক নিয়োগ বাবদ ১৬ কোটি ৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দের আবদার করা হয়েছে। যেখানে ওই প্রকল্পের মোট ব্যয় মাত্র ২৪ কোটি টাকা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ওই প্রকল্পের এই ব্যয় অত্যাধিক বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পের আওতায় যেহেতু একটি ‘কম্প্রিহ্যানসিভ স্টাডি’ (বিস্তৃত সমীক্ষা) সম্পন্ন করা হবে, সেহেতু একটি বা দুটি ফার্মের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা যেতে পারে বলে মত দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের নাম ‘স্টাডি ফর প্রিপারেশন অব ঢাকা নর্থ নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য এলাকাসমূহ নির্বাচন করাসহ প্রকল্পের অন্যান্য বিষয় চিহ্নিত করা হবে।
পরিবেশগত ও সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য যথাযথ প্রস্তুতির লক্ষ্যেই বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় সমীক্ষা প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ডিএনসিসিও অর্থায়ন করবে।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। বৈদেশিক ঋণ ২৩ কোটি ২ লাখ টাকা এবং ডিএনসিসির নিজস্ব অর্থায়ন ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিসের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। সভায় ওই প্রকল্পে পরামর্শক খাতে অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
পিইসি সভায় উল্লেখ করা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়নাধীন ‘ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্টের’ আওতায় ব্যক্তি পরামর্শকের বেতন ভাতা বাবদ প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রতি মাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একই প্রকল্পে ব্যক্তি পরামর্শকের জন্য ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিনিয়র আরবান ও সিনিয়র প্রকিউরমেন্ট স্পেসিয়ালিস্ট পরামর্শক বাবদ ১২ জনমাসের জন্য ৫৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা অত্যাধিক বলে মত দিয়েছে কমিশন। বিস্তারিত আলোচনার পর ব্যক্তি পরামর্শকদের বেতন ভাতা বাবদ ব্যয় পুনরায় নির্ধারণ করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কাজী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক খাতসহ অন্যান্য বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা যেভাবে চেয়েছি তারা (ডিএনসিসি) সেইভাবে প্রকল্প তৈরি করে আনবে। সংশোধনী দেখে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা বা সিদ্ধান্ত নেব। ”
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ৩৫ লাখ, কর্মশালা বাবদ ২৮ লাখ, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ৬৫ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশিক্ষণে কারা ও কতদিন অংশ নেবেন তা জানতে চাওয়া হলে ডিএনসিসির প্রতিনিধি সভাকে জানান, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
স্থানীয় প্রশিক্ষণ ও সেমিনার বাবদ ৫০ শতাংশ ব্যয় কমিয়ে ন্যূনতম ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কম্পিউটার, অফিস ইক্যুইপমেন্ট খাতে ৫৪ লাখ ১৯ হাজার, অফিস ভাড়া বাবদ ১ কোটি ২০ লাখ, নৈমেত্তিক শ্রম বাবদ ৮ লাখ, বই পত্র জার্নাল বাবদ ৫ লাখ, মনোহারি বাবদ ৩৩ লাখ, বীমা ও ব্যাংক চার্জ বাবদ ১৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এসব ব্যয় পুনরায় বিবেচনা করে নির্ধারণ করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।