কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে হত্যার পর \’আত্মহত্যা\’ বলে প্রচারের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) মধ্যরাতে ওই ছাত্রীর শয়ন কক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পরিবার।
মারা যাওয়া ওই ছাত্রীর নাম উলফাত আরা তিন্নি (২৪)। তার বাড়ি ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামে। গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলীর মেয়ে তিনি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিন্নি।
পরিবার বলছে, ওই ছাত্রীর বড় বোনের সাবেক স্বামী দলবল নিয়ে দুই দফা বাড়িতে হামলা চালিয়ে নির্যাতনের পর ওই ছাত্রীকে হত্যা করেছে। এরপর \’আত্মহত্যা\’ বলে প্রচার চালাতে লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
তিন্নির খালাতো ভাই মখলেছুর রহমান জানান, তিন্নির বড়বোন মিন্নির সঙ্গে একই গ্রামের পুনুরুদ্দিনের ছেলে জামিরুলের বিয়ে হয়। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় জামিরুলের সঙ্গে মিন্নির বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিন পরেই আবার মিন্নিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে জামিরুল। এজন্য জামিরুল নানা ভাবে নিহত তিন্নির পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিল।
তিনি আরও জানান, এরই জেরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিন্নিদের বাড়িতে এসে জামিরুল বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে ভাংচুর চালায়। পরে রাত ১০টার দিকে জামিরুল আরও ১৫/২০ জন লোক নিয়ে তিন্নিদের বাড়িতে হামলা করে। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী তিন্নি বাড়ির দুই তলায় নিজের ঘরে পড়ছিলেন। এসময় জামিরুল লোকজন নিয়ে ওই ঘরে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে তিন্নিকে চরম মারধর করে। একপর্যায়ে জামিরুল তার লোকজন নিয়ে চলে যায়। এর ১০ মিনিট পরেই তিন্নির মা ও বোন বাড়ির দুই তলায় গিয়ে তিন্নির ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়। পরে তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে পুলিশে খবর দেয়।
মৃত তিন্নির বড় বোন মিন্নি বলেন, জামিরুল ইসলাম ও তার লোকজন দোতলায় উঠে তিন্নির সঙ্গে খারাপ কিছু করেছে। তারা সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা অবস্থায় তিন্নিকে পেয়ে দ্রুত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, তাকে নিয়ে আসার আগেই মারা গেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রুমন রহমান লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে আত্মহত্যা। তবে কিছু আলামত পাওয়া গেছে। সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর জানা যাবে আরও কোনও ঘটনা আছে কি না। ওই প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এ বিষয়ে শৈলকুপা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম জানান, তিন্নির মৃত্যুটি রহস্যজনক। হয়তো হামলাকারীরা তার সঙ্গে এমন কিছু করেছে, যে কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না, এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা।
এদিকে, তিন্নির এ মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক বলে দাবি করেছেন তিন্নির সহপাঠীরা। তিন্নির মৃত্যুর ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করার দাবি জানিয়ে হতকাল শুক্রবার (২ অক্টোবর) বিকেলে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে মানববনন্ধন করছে তার সহপাঠীরা।