দক্ষিণ চীন সাগরে একা হয়ে পড়ছে চীন। দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র থাইল্যান্ড নিঃশব্দে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে পিছু হটছে। সম্প্রতি সাবমেরিন চুক্তি বাতিল করে চীনকে বড় ধাক্কা দিয়েছে থাইল্যান্ড। শুধু তা-ই নয়, দেশটি বঙ্গোপসাগরে একটি সংযোগ খাল খননের চীনা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
জনগণের ক্ষোভের মুখে চীন থেকে ৭২৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে দুটি সাবমেরিন কেনার চুক্তি স্থগিত করেছে থাইল্যান্ড সরকার। ২০১৫ সালে হওয়া চুক্তির আওতায় থাইল্যান্ড নৌবাহিনীর জন্য চীন থেকে সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এই চুক্তির অধীনে ২০১৭ সালে তিনটি সাবমেরিন কেনার বিষয় চূড়ান্ত হয়েছে।
প্রথম সাবমেরিনটি ২০২৩ সালে সরবরাহ করার কথা চীনের। এরই মধ্যে প্রস্তাব ওঠে- ৭২৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে আরো দুটি সাবমেরিন আনা হোক। আগস্ট মাসে সংসদীয় উপকমিটি প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে- ‘অর্থনীতির পতন ঠেকানোর সংগ্রামে লিপ্ত থাই জনগণ সাবমেরিন চায় না।’ এর পরই চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয় থাই সরকার।
ইউরো এশিয়ান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মালাক্কা সমস্যা’ সমাধানের জন্য চীন থাইল্যান্ডে একটি সংযোগ খাল খননের প্রস্তাব দেয়। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ থাই খালটি চীনের মেরিটাইম সিল্ক রোড উদ্যোগের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যা চীনের উচ্চাভিলাষী ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পের মূল উপাদান।
মালয় উপদ্বীপে অবস্থিত থাই খালটি ভারত মহাসাগরে যাওয়ার অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল বেইজিং। এটা খনন করা হলে চীনের জন্য দ্বিতীয় সাগর রুট খুলে দিতে পারত। এ পথে চীনের নৌবাহিনী দ্রুতগতিতে দক্ষিণ চীন সাগরে নবনির্মিত ঘাঁটিগুলো থেকে ভারত মহাসাগরে যেতে পারবে। যার ফলে দেশটির নৌ সেনাদের মালয়েশিয়ার দক্ষিণ অংশ হয়ে আরো ৭০০ মাইল ঘুরে আসতে হবে না। এ কারণে থাইল্যান্ডের এ খালটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে চীন। তবে চীনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে থাইল্যান্ড।
ফরেন পলিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসল উদ্বেগ হলো এই খালটিতে চীনা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হলে সেটা মিয়ানমার এবং কম্বোডিয়ার মতো দরিদ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর স্বাধীনতাকে আরো ক্ষুণ্ন করবে। দেশগুলো এরই মধ্যে চীনা হস্তক্ষেপের কারণে তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দেশগুলোর নাগরিকরা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
থাইল্যান্ড চীনা খাল খনন প্রকল্প প্রস্তাব বাতিল করায় সেটা নয়াদিল্লির জন্য স্বস্তি হিসেবে এসেছে। চীনের উদ্দেশ্য সফল হলে থাই খাল হয়ে ভারতকে ঘিরে ফেলতে পরিষ্কার পরিকল্পনা নিতে পারত বেইজিং।
: ইউরো এশিয়ান টাইমস।