নতুন কোচের আগমন সত্ত্বেও স্বাভাবিক হচ্ছে না বার্সেলোনার পরিস্থিতি। একের পর এক নতুন ইস্যু সামনে আসছে। ক্যাম্প ন্যু’র সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ এখন লিওনেল মেসি। ক্লাবের প্রাণভোমরাকে ধরে রাখার নানাবিধ চেষ্টার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই এমন ঘটনা সামনে এলো যা নিয়ে রীতিমত হইচই পড়ে গেছে।
মেসিকে অখুশি রাখা বার্সার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। কারণ মাঠের খেলায় তার ভূমিকা আর মাঠের বাইরে তার নাম ব্যবহার করে যে পরিমাণ অর্থ আয় করে কাতালান জায়ান্টরা, অন্য কেউ তার ধারেকাছেও নেই। ফলে তাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা কিন্তু অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের সঙ্গে বার্সা অধিনায়কের একান্ত বৈঠকের সব তথ্য বাইরে চলে আসার পর পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেছে।
নতুন কোচ যোগ দিলে ক্লাবের শীর্ষ তারকা কিংবা অধিনায়কের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করবেন এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে বাইরে হইচই করার সুযোগ নেই। কোম্যানের সঙ্গে মেসির আলোচনাও সেরকমই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আলোচনার পুরোটাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় মেসির জন্য বিষয়টা বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। অবশ্য এর আগে থেকেই মেসির ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছে। ক্লাবের সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর নিয়েও কোনো আলোচনায় যাচ্ছেন না আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
মেসির বার্সা ছাড়ার গুঞ্জন আগেও শোনা গেছে। কিন্তু এবার সম্ভাবনাটা অনেক বেশি। কারণ বোর্ডের হঠকারী সিদ্ধান্তে ডুবতে বসেছে বার্সা। না বুঝে খেলোয়াড় কিনে ব্যর্থ দলবদলের এক লজ্জাজনক অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে বর্তমান বোর্ড। ক্লাবের আর্থিক অবস্থাও খারাপ। এই দল থেকে মেসিকে বাদ দলে দ্বিতীয় সারির দলের সঙ্গেও পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে। রক্ষণ থেকে আক্রমণভাগ কিছুই ঠিক নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত করে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ।
মেসির মতো শীর্ষ তারকা ‘দ্বিতীয় সারি’র কোনো দলে খেলতে চাইবেন কেন? যদিও বার্সাই তার আসল ঠিকানা। এই ক্লাবের প্রতি তার ভালোবাসায় কোনো খুঁত নেই। কিন্তু পরিস্থিতি এতই খারাপ এখন যে, নতুন কোচের সঙ্গে বৈঠকে ক্যাম্প ন্যুয়ে নিজের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। কোম্যানকে তিনি সরাসরি বলে দিয়েছেন যে তিনি এখন নিজেকে ‘ক্লাবের ভেতরের চেয়ে বাইরেই’ বেশি দেখছেন। কিন্তু তাদের আলোচনার পুরোটাই গণমাধ্যমে চলে আসায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন মেসি। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ এমনটাই দাবি করেছে।
‘আরএসিওয়ান’ নামের একটি স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মেসি ও কোম্যানের বৈঠকের সব তথ্য প্রকাশ করেছে। এই সংবাদমাধ্যমটি বার্সেলোনা প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তমেউ নিয়ন্ত্রিত বোর্ডের পক্ষে খোলামেলা প্রচার করে থাকে। ফুটবলবিষয়ক ব্লগ ‘ইএসপিএন’ দাবি করেছে, ওই রিপোর্টে প্রকাশিত মেসির বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বরং ক্লাবের বোর্ডের কয়েকজন সদস্য নাকি তাকে ক্লাব ছাড়তে বাধ্য করতেই কুৎসা রটাচ্ছেন। তারা চাইছেন, মেসির বদনাম ছড়াতে। যেন সবাই বিশ্বাস করে যে ডুবন্ত বার্সার পাশে থেকে লড়াই চালানোর চেয়ে পালিয়ে যাওয়ার দিকেই মনোযোগ মেসির!
মেসির সঙ্গে বার্সার বোর্ডের এমন বিমাতাসুলভ আচরণ এবারই প্রথম নয়। গত বছর বার্সা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মেসি ও দলের আরও কয়েকজন শীর্ষ তারকার বিরুদ্ধে অনলাইনে কুৎসা রটানোর অভিযোগ উঠেছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাবেক কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দেকে বরখাস্ত করার পেছনে খেলোয়াড়দের অসহযোগিতাকে দায়ী করেছিলেন সদ্য সাবেক ক্রীড়া পরিচালক এরিক আবিদাল। করোনা মহামারি শুরুর পর খেলোয়াড়দের বেতন কমানো নিয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে উল্টাপাল্টা বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। পরে এসবের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন স্বয়ং মেসি।
প্রায় এক যুগ পর শিরোপাশূন্য মৌসুম কাটালো বার্সা। চ্যাম্পিয়ন লিগের শিরোপা জেতা হয় না টানা কয়েক বছর। এমন এক দলে মেসির মতো ফুটবলার ঠিক কতদিন থাকবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছেই। কিন্তু ‘ইএসপিএন; দাবি করেছে, বার্সার বোর্ডের কয়েকজন সদস্য চান ভালো কোনো অফার পেলে মেসি যেন চলে যান। কারণ তাকে বিদায় করে দেওয়ার সাহস বোর্ডের নেই। মেসিকে বেচে তা দিয়ে একাধিক নতুন খেলোয়াড় কেনা এবং তার মোটা অঙ্কের বেতন দেওয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার যুক্তি দেখান এসব বোর্ড সদস্যরা। তবে অধিকাংশ বোর্ড সদস্য এখনও মেসি ক্লাব ছাড়বেন এমনটা বিশ্বাস করেন না। খোদ ক্লাব প্রেসিডেন্ট বার্তমেউ মেসিকে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। কারণ মেসির ওপর তার নিজের প্রেসিডেন্ট পদের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল।