মাটি ছাড়াই ঘাস, ফল, ফসল বা কোন উদ্ভিদের চাষাবাদের যে ভিন্নধর্মী পদ্ধতি রয়েছে সাধারণত এটাকেই হাইড্রোপনিক পদ্ধতি বলতে পারেন। জমিতে ঘাস চাষের প্রচলিত ধারণা বদলে ঘরের ভিতরে মাটি ছাড়া কেবল পানি ছিটিয়ে পশুখাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব।
হাইড্রোফনিক (মৃত্তিকাবিহীন জল চাষ বিদ্যা) ফডার নামের এই প্রযুক্তিতে পশুখাদ্য উৎপাদনে খরচ কম। এই খাদ্যে বাজারের দানাদার ও মাঠের সবুজ ঘাসের প্রায় সব পুষ্টিগুণ আছে। এতে গরু-ছাগলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ দুধের পরিমাণও বাড়ে। প্রতিদিন গরুকে পুষ্টিকর খাদ্য দেওয়া বিরাট চ্যালেঞ্জ। বাজারে দানাদার খাদ্যে গুণগত মান সব সময় ঠিক থাকে না।
সে জন্য গরুর বদহজমসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া মাঠে লাগানো ঘাসে কৃমি ও শামুকের কারণে পশুর রোগব্যাধি হয়। এই ঘাস ব্যবহারে গরুর দুধে ননি ও ঘনত্ব ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এক কেজি বীজ থেকে ৯ দিন পরে ৮ থেকে ১০ কেজি তাজা ঘাস পাওয়া যায়। পাঁচ বিঘা জমিতে যে পরিমাণ ঘাস উৎপাদিত হয়, তা মাত্র ৩০০ বর্গফুটের একটি টিনশেডের ঘরে সেই পরিমাণ হাইড্রোফনিক ঘাস উৎপাদন করা যায়। রাজশাহীতে হাইড্রোফনিক ঘাসের চাষ শুরু করেছেন আরাফাত রুবেল।
তিনি জানান, রাজশাহীর শহর এলাকাতেও অনেকে গরু-বাছুর পালতে পছন্দ করেন। আর গরুকে যত প্রকার খাবারই দেওয়া হোক না কেন, ঘাসই তাদের সবচেয়ে পছন্দের খাবার। কিন্তু যাদের পক্ষে মাঠে গিয়ে গরুকে ঘাস খাওয়ানো সম্ভব নয়, তারা এই পদ্ধতিটি অতি সহজে ব্যবহার করতে পারেন। তিনি জানান, ধান, গম, ভুট্টার দানা জাতীয় রবিশস্য থেকে এই ঘাস জন্মানো সম্ভব। বর্তমানে রাজশাহীতে ভুট্টার কেজি ১৭-১৮ টাকা থাকায়, তিনি ভুট্টা দিয়ে এই হাইড্রোফনিক ঘাসের চাষ করেছেন নিজ ঘরে।
এর পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, প্রথমে ভুট্টা সংগ্রহ করে তা ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে তা ছেঁকে তুলে নিতে হবে। এবার একটি চটের বস্তায় করে বেঁধে অন্ধকার ঘরে এক দিন ফেলে রাখার পর সেটিকে তুলে একটি ট্রেতে সাজিয়ে রাখতে হবে। তারপর কোনো ঘন রংযুক্ত কাপড় দিয়ে ট্রে-টি ঢেকে প্রতিদিন হালকাভাবে পানি স্প্রে করতে হবে।
এভাবেই ৮-৯ দিনের মধ্যে ঘাস গজানো শুরু হবে। আরাফাত রুবেল আরও জানান, এই ঘাস খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। তিনি জানান, রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অফিসে একটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি এই ঘাস চাষ সম্পর্কে জেনেছিলেন। পরবর্তীতে অনলাইনে বিভিন্ন সাইটে দেখে ভালোভাবে রপ্ত করেছেন।