পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কক্সবাজারের চকরিয়ায় আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতাকে প্রকাশ্যে বিলের মাঝে নিয়ে গিয়ে যুবলীগ নেতা কর্তৃক বিবস্ত্র করাসহ শারীরিকভাবে ব্যাপক মারধরের একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। এনিয়ে সর্বত্র তোলপাড় চলছে।
ঘটনায় জড়িত যুবলীগ নেতাসহ ইন্ধনদাতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে জোর দাবি উঠেছে। সত্তরোর্ধ প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতার ওপর এমন বর্বর ঘটনাটি সংঘটিত হয় গত ২৪ মে উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছাপাড়া সংলগ্ন সড়কের পাশে বিলের মধ্যে।
এদিকে প্রবীণের ওপর বর্বর এই নির্যাতনের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়ার পর কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের নির্দেশে চকরিয়া থানার পুলিশ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে মাঠে নেমেছে।
জানা গেছে, বর্বর নির্যাতনের শিকার প্রবীণ ব্যক্তির নাম মো. নুরুল আলম (৭২)। তিনি উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের ছয়কুড়িটিক্কা পাড়ার মৃত আলী মিয়ার ছেলে এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ সদস্য।
এছাড়াও ঘটনায় জড়িত যুবলীগ নেতার নাম আনছুর আলম (৩৫)। সে একই ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এবং মৃত মনির উল্লাহর ছেলে।
অপরদিকে চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সভাপতির পদসহ সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কার করার জন্য ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম শহীদ ও সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির।
বর্বরতার শিকার প্রবীণ নুরুল আলমের ছেলে আশরাফ হোছাইন বাদী হয়ে গত ৩১ মে চকরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। সেই অভিযোগটির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানা থেকে প্রেরণ করা হয় বদরখালী পুলিশ ফাঁড়িতে।
অভিযোগের বাদী আশরাফ হোছাইন অভিযোগ করেন, ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য (মেম্বার) আরেজ খাতুন ও প্রভাবশালী বদিউল আলমের ইন্ধনে তার বাবা নুরুল আলমকে প্রকাশ্যে ইজিবাইক টমটম থেকে জোর করে নামিয়ে বিলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করাসহ শারীরিকভাবে ব্যাপক মারধর করা হয়।
আশরাফ হোছাইন আরো অভিযোগ করেন, চার নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আনছুর রহমান একজন দুর্ধর্ষ ডাকাত। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। আর ঘটনার অন্যতম ইন্ধনদাতা ইউপি সদস্য আরেজ খাতুন ও স্থানীয় বদিউল আলম। তাদের ইন্ধনেই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা আনছুর রহমান এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন।
কেন এই ঘটনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে অভিযোগের বাদী আশরাফ হোছাইন বলেন, ‘ঘটনার ইন্ধনদাতা ও জড়িতদের সঙ্গে আমাদের পূর্ব শত্রুতা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সেই শত্রুতার জের ধরে আমার বাবাকে ঈদের আগে বিবস্ত্রসহ ব্যাপক মারধর করে। এ সময় আশপাশে অসংখ্য ব্যক্তি নীরব দর্শক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকলেও সন্ত্রাসী আনছুর রহমানের দাপটের মুখে সবাই অসহায় অবস্থায় ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।’
তবে এই ঘটনার পেছনে কোনো ধরনের ইন্ধন দেননি জানিয়ে অভিযুক্ত আরেজ খাতুন বলেন, ‘প্রবীণ ব্যক্তিকে এই ধরনের নির্যাতন কোনোভাবেই সহ্য করার নয়। তাছাড়া যে এই ঘটনা সংঘটিত করেছে সেই আনছুর আলম আমার দেবর হলেও তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কও নেই। এমনকি পারিবারিক বিরোধে তার সঙ্গে কথাবার্তা পর্যন্ত হয় না দীর্ঘদিন ধরে।
অতএব ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাকেও এই ঘটনায় জড়ানো হচ্ছে। যা আদৌ সত্য নয়।’ অন্য অভিযুক্তদের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতার ওপর যে ঘটনাটি ঘটেছে তা সভ্য সমাজে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এটি বর্বরতা। তাই ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একজন বাবার বয়সী ব্যক্তিকে বিবস্ত্র করাসহ শারীরিক মারধরের বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। আশা করছি, সহসাই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।’
:কালের কণ্ঠ