সারা দেশ থেকে এসএসসি ও সমমানে এ বছর ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছে। এসব শিক্ষার্থী এখন একাদশে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছে। জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও মাদ্রাসা মিলে সারা দেশে একাদশে ভর্তিযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ। তাই একাদশে ভর্তির জন্য আসন পেতে শিক্ষার্থীদের কোনো বেগ পেতে হবে না। তবে মানসম্মত কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না সিংহভাগ ছাত্র-ছাত্রী।
ভালো ফল করেও মানসম্মত কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে এখন সংশয়ে রয়েছে একাদশে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ফল প্রকাশের এক সপ্তাহ পরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ বছর একাদশে ভর্তি প্রক্রিয়া বিলম্ব হবে। কবে নাগাদ এ প্রক্রিয়া শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সারা দেশে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা কত, এমন প্রশ্নের জবাবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, সব কলেজেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক রয়েছে। তাই কোনটি মানসম্মত নয়, এটি বলা যাবে না।
তিনি বলেন, কিছু কলেজে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি রয়েছে। তাছাড়া ভালো ফল করা ছাত্র-ছাত্রীরা যেসব কলেজে ভর্তি হবে সেই কলেজ এমনিতেই তুলনামূলকভাবে ভালো ফল করে। আর সুনাম থাকা কলেজগুলোতে ভর্তির একটি প্রতিযোগিতা সারা বিশ্বেই দেখা যায়। তাই সুনাম থাকা কলেজগুলোতে চাইলেও সবাই ভর্তি হতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক বিষয়। এসএসসি ও সমমানের ফল পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সারা দেশ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন।
জিপিএ ৪ থেকে জিপিএ ৫ এর মধ্যে ফলাফল অর্জন করেছে ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৯৭২ জন। সাধারণভাবে এই প্রায় সাত লাখ শিক্ষার্থীর আগ্রহের তালিকায় থাকে ভালো মানের কলেজগুলো। কিন্তু সারা দেশে ভালো মানের কলেজ রয়েছে প্রায় ২০০। সে হিসাবে জিপিএ ৫ পাওয়া সিংহভাগ শিক্ষার্থীরাও এই ভালো মানের কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকা বোর্ডে কলেজের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১০০। এসব কলেজে প্রায় ৬ লাখ শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তি হতে পারবে। তিনি বলেন, ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগকেই মধ্যম মানের কলেজগুলোতে ভর্তি হতে হবে।
জানা গেছে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিমে সারা দেশে ভর্তিযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯ হাজার। এসব মাদ্রাসায় আসন রয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ২৬০টি। এ বোর্ড থেকে সারা দেশে পাস করেছে ২ লাখ ২৮ হাজার ৪১০ জন। সে হিসাবে এ শিক্ষার্থীদের আসন পেতেও কোনো ভোগান্তি পোহাতে হবে না। প্রতিবছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ফল প্রকাশের এক সপ্তাহ পরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। অনলাইন ও মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে চলে ভর্তি কার্যক্রম।
ভর্তি কার্যক্রম শেষে প্রতিবছর ১ জুলাই কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় একাদশে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে সময় লাগবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। একাদশে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলো বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ এ প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই একাদশের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে। ভালো ফল করেও মানসম্মত কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সংশয় সম্পর্কে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, অন্য বিষয়ের মতো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও অনেকটা রাজধানীকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। জেলা পর্যায়ে অনেক ভালো ভালো কলেজ থাকলেও এ কলেজগুলোও অবহেলিত। সরকারের বড় বড় কর্তারা রাজধানীর কলেজে সন্তানদের পড়াতে চান। তাই বাইরের কলেজের উন্নয়নে কেউ দৃষ্টি দেন না। শিক্ষকরাও তাই সুযোগ পেলে ট্রান্সফার হয়ে রাজধানীর কলেজগুলোতে আসতে চান। এর কারণ হচ্ছে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধার অভাব।
তাই রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ ও বিভাগভিত্তিক গুটিকয়েক কলেজের দিকেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার প্রবণতা থাকে। তিনি বলেন, রাজধানীসহ বিভাগের শীর্ষ কলেজগুলোতে সচ্ছল পরিবারের সন্তানরাই ভর্তি হন। এরপর প্রাইভেট, টিউশনসহ নানা মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফল করেন। এ অধ্যাপক আরও বলেন, উপজেলা-জেলা পর্যায়ের কলেজেও ভালোভাবে লেখাপড়া করে ভালো ফল করা সম্ভব। তাই বড় কলেজগুলো নিয়ে মিথ ভাঙতে হবে।
কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সরকারকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কলেজগুলোর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।