প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস কি উহানের ল্যাব থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে? গোটা বিশ্বে এখন এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এরই মধ্যে উহানের ওই ল্যাব নিয়ে সামনে এল আরো এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। চীনের ওই ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটে তিনটি জীবন্ত করোনাভাইরাস ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম সিজিটিএনকে নিজেই এসব তথ্য জানিয়েছেন ওই ল্যাবের পরিচালক ওয়াং ইয়ানই। যদিও কভিড-১৯ এর সঙ্গে তাদের কোন মিল নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
সারাবিশ্বে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে এই ভাইরাস। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোও করোনার সঙ্গে পেরে উঠছে না। প্রথম থেকেই এই ভাইরাসের পেছনে চীনের হাত রয়েছে বলে দাবি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার দাবি, উহানের ওই ল্যাবরেটরি থেকেই লিক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাস। বিশেষ করে এই ভাইরাসের কারণে যে মহামারি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য বার বার চীনকেই দোষারোপ করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এদিকে, উহান নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যেই ওই ল্যাবে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে কথা বললেন এর পরিচালক। ওয়াং ইয়ানই বলেন, ওই গবেষণাগারে বাদুড় থেকে কিছু করোনাভাইরাস আইসোলেট করে রাখা হয়েছিল।
তার দাবি, বাদুড়ের দেহ থেকে পাওয়া ওই তিনটি জীবন্ত করোনাভাইরাসের সঙ্গে কোভিড-১৯’র কোনও সম্পর্ক নেই। ওয়াং ইয়ানই বলেন, তাদের ল্যাবে যে কয়টি করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা হয়েছে সেগুলোর কোনটির সঙ্গেই কোভিড-১৯’র মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ওয়াং ইয়ানই আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং অন্যরা চীনের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে যে, এই ভাইরাস উহানের ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
গত ১৩ মে তার এই সাক্ষাৎকার ধারণ করে সিজিটিএন। এটি স্থানীয় সময় শনিবার রাতে প্রচার করা হয়।
তাঁর দাবি ল্যাবে থাকা ওইসব জীবন্ত ভাইরাসের সঙ্গে সার্সের সম্পর্ক রয়েছে, কভিড-১৯ এর কোনো সম্পর্ক নেই। রিসার্চ টিমের আরো এক অধ্যাপক ঝেংলি জানিয়েছেন, ২০০৪ সাল থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছেন তারা। তবে গবেষণা হয় মূলত সার্স নিয়ে, যা প্রায় দুই দশক আগে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর আরো দাবি করেছেন, গত ডিসেম্বরের প্রথম ওই ভাইরাসের নমুনা তাদের হাতে আসে। এরপর চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে রিপোর্ট পেশ করেন তারা। তিনি বলেন, ওই নমুনা পাওয়ার আগে পর্যন্ত অন্যদের মতো আমরাও এই ভাইরাসের অস্তিত্বের কথা জানতাম না। সুতরাং ল্যাবরেটরি থেকে কভিড-১৯ ভাইরাস লিক হবে কি করে? ল্যাবরেটরিতে তো আগে ভাইরাস ছিলই না।\’
অন্যদিকে, দ্য ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে করোনাভাইরাসের সফল টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছেন চীনের ক্যানসিনো বায়োলজিকস ইনক। তাদের তৈরি ভ্যাকসিন, হিউম্যান ট্রায়ালে নিরাপদ এবং দ্রুত প্রতিরোধ ক্ষমতা জাগ্রত করে বলে প্রমাণিত হয়েছে। চীন ও কানাডা যৌথভাবে ওই ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনার আঁতুড়ঘর উহানে ১০৮ জন বয়স্ক মানুষের ওপর প্রাথমিকভাবে ওই টিকা প্রয়োগ করা হয়। দেখা গেছে, তাদের মধ্যে করোনা প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তবে এই টিকার কিছু হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন- ইনজেকশানের জায়গায় খানিকটা ব্যথা, জ্বর, ক্লান্তি আর মাথাব্যথা।
: এনডিটিভি।