মহামারী করোনার প্রভাবে গোটা দেশে বিরাজ করছে অস্থিতিশীল পরিবেশ। ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আজ সোমবার সকালে বিক্ষোভ করেছেন। কোনো কারখানা খোলার দাবিতে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন, আবার কোনো কারখানা বন্ধ করার জন্য শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দিয়ে ফিরে যাওয়ায় কারখানা বন্ধ ঘোষণার খবরও পাওয়া গেছে।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ নতুন করে কয়েকটি কারখানায় কাজ শুরু হয়েছে এবং শ্রমিকদের অনীহার কারণে কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন।
শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সব কারখানা একসঙ্গে না খোলার কারণে চালু হওয়া কারখানার শ্রমিকেরা অনেকটা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন। তাঁরা (চালু হওয়া কারখানার শ্রমিক) মনে করেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকেরা ঘরে বসেই বেতন পাবেন বলে ধারণা তাদের। আর তাদের কাজে এনে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে। এ কারণে চালু হওয়া অনেক কারখানার শ্রমিকেরা কাজ করতে চাচ্ছেন না।
পুলিশ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সকালে কারখানা চালু হওয়ার পরপরই কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন আশুলিয়ার নরসিংহপুরের শারমীন গ্রুপের শ্রমিকেরা। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যান।
এই কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বর্তমান অবস্থায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে গত শনিবার কারখানা খোলার দিন দুই শিফট চালু করা হয়েছিল। অর্ধেক শ্রমিক সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত আর বাকি অর্ধেক শ্রমিক বেলা আড়াইটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করছিলেন। এতে শ্রমিকেরা ছয় ফুট দূরত্বে বসে কাজ করতে পারতেন। কিন্তু শ্রমিকেরা নানা অজুহাতে এক শিফট চালু করার দাবি জানান। তাঁদের দাবি অনুযায়ী আজ থেকে এক শিফট চালু করা হয়েছিল। এরপরও আজ সকালে শ্রমিকেরা কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। পরে অবশ্য আলোচনার ভিত্তিতে তাঁরা কাজে ফিরতে সম্মত হয়েছেন।
একই এলাকার হা-মীম গ্রুপের শ্রমিকেরা আজ কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় কাজ করতে অপরগতা প্রকাশ করেন। পরে কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কারখানার মূল ফটকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ক্রয় আদেশ বাতিল, শ্রমিকদের নিরাপত্তা আর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
অন্যদিকে জামগড়ার নেক্সট কালেকশন নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরাও আজ সকালে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
আশুলিয়ার সিগমা ফ্যাশনসের ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকেরা আজ বেলা ১১টার দিকে কারখানার সামনে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা ছাঁটাইয়ের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
এদিকে সাভারের উলাইল এলাকার কে এল ডিজাইন অ্যাপারেলসের শ্রমিকেরা কারখানা খোলার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। গত রোববার থেকে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে আজ মূল ফটকে বন্ধের নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রয় আদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ায় আগামী তিন মাস কারখানাটিতে কোনো কাজ থাকবে না। এ কারণে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
কে এল ডিজাইনের কয়েকজন শ্রমিক বলেন, আজ তাঁদের কারকানা চালু হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে তাঁরা কারখানা বন্ধ দেখতে পান। বন্ধের বিষয়টি আগে জানানো হলে তাঁরা দূর থেকে ঝুঁকি নিয়ে সাভার বা কর্মস্থলে উপস্থিত হতেন না। এ কারণে তাঁরা কারখানা খোলার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, মালিক ও বিজিএমইএর পক্ষ থেকে পোশাক কারখানা বন্ধ ও খোলার বিষয়ে একেক সময় একেক ঘোষণা ও সিদ্ধান্তে শ্রমিকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন। এসব কারণে শ্রমিকেরা কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও অনেক কারখানার শ্রমিকেরা নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে কাজ করতে চাচ্ছেন না।