করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৫৮ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৭ জনই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়া সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন, এমন ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্যকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর এবং ডিএমপি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও লকডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। এ ছাড়া রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো, শ্রমজীবী মানুষকে সহায়তা করা, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া এবং কোয়ারেন্টিন থেকে পালানোদের খুঁজে বের করার কাজ করছেন তাঁরা। পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী না থাকায় দায়িত্ব পালনের সময় ‘অসাবধানতাবশত’ সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের মধ্যে এই সংক্রমণ হচ্ছে।
বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যসংখ্যা দুই লাখের বেশি। পুলিশের কর্মকর্তা পর্যায়ের সদস্যরা সাধারণত নিজেদের বাসায় অবস্থান করেন। তবে অনেক পুলিশ সদস্যই অবস্থান করেন জেলাগুলোর পুলিশ লাইনসে। এসব জায়গায় একটি কক্ষে ১০ থেকে ১২ জন করে সদস্য থাকেন। তাঁদের যেকোনো একজন থেকে অনেকের মধ্যে সংক্রমণ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পুলিশের আক্রান্ত ৫৮ জনের মধ্যে ২৭ জন ডিএমপিতে, ১১ জন গোপালগঞ্জে, ৬ জন নারায়ণগঞ্জে, ৫ জন গাজীপুর মহানগর পুলিশে, ২ জন কিশোরগঞ্জে এবং ১ জন করে ময়মনসিংহ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ, পুলিশ টিঅ্যান্ডআইএম, এপিবিএন ময়মনসিংহ, নৌ–পুলিশ ইউনিট ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্য।
এ ছাড়া ৬৩৩ জন পুলিশ সদস্যকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৪৩ জন। আর কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৮৫ জন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় দুই থানার সব পুলিশ সদস্যকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা আক্রান্ত হওয়ার পর ২২ কর্মকর্তাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
গুলশান উপকমিশনারের কার্যালয়ে একজন সাধারণ কর্মচারী আক্রান্ত হওয়ার পর উপকমিশনারসহ ছয় কর্মকর্তা কোয়ারেন্টিনে গেছেন। রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাকে একজন সদস্য আক্রান্তের পর তাঁর পাশে থাকা আটজনকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় দাঙ্গা দমন বিভাগে (পিওএম) একজন আক্রান্ত হওয়ার পর একই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনস ব্যারাকে একজন আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যারাকে থাকা ২০০ পুলিশ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার পর্যন্ত এখানকার ১২ জন পুলিশ সদস্য করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন। এরপর আজ শুক্রবার পর্যন্ত আরও ১৫ জনের সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের যে সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা সবাই বাইরে দায়িত্ব পালনে গিয়েছিলেন। অসাবধানতাবশত মানুষের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন বলে তাঁরা মনে করছেন।
দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় প্রথম থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো এখন আরও জোরদার করা হচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে, এমন পুলিশ সদস্যদের আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। তাঁদের জন্য ডেমরার অস্থায়ী পুলিশ লাইনসে ১০০টি বিছানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজারবাগ মেহমানখানা এবং মিরপুর মেহমানখানায়ও কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঢাকা থেকে যাওয়া এক পুলিশ সদস্যের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, পুলিশ কনস্টেবল পদে ঢাকায় কর্মরত ওই যুবক ১২ এপ্রিল বাড়ি ফিরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হন। ১৩ এপ্রিল আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য যান। ওই দিন তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১৪ এপ্রিল পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে। গতকাল সন্ধ্যায় সেখান থেকে তাঁর করোনা পজিটিভ নিশ্চিত করা হয়।
পুলিশের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, পুলিশের যেসব সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের পুলিশের স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্র গুলোতে আইইডিসিআরের নিয়ম অনুসরণ করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। কারও শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তখন আইইডিসিআর যে হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেগুলোতে স্থানান্তর করা হবে।
:প্রথম আলো