‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ অনুযায়ী আইন লঙ্ঘনকারীদের মামলা দেওয়া শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। ডিএমপি ট্রাফিকের চারটি বিভাগের মধ্যে তিনটি বিভাগ সীমিত পরিসরে এই কার্যক্রম শুরু করেছে। গত ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হলেও পুলিশ এত দিন আইন লঙ্ঘনকারীদের মামলা দেওয়া থেকে বিরত ছিল। নতুন আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল তারা।
গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত ও ৯ জন আহত হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের’ মুখে সরকার ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন পাস করে। মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপে এটি কার্যকর করতে এক বছরের বেশি সময় লেগে যায়।
নতুন সড়ক পরিবহন আইনে বেশির ভাগ ধারার জরিমানা ১০ থেকে ৫০ গুণ বাড়ানো হয়েছে। আগে যেসব ধারায় এক মাস কারাদণ্ডের বিধান ছিল, এখন তা দুই বছর পর্যন্ত হয়েছে। আইনের বেশির ভাগ ধারাতেই সর্বোচ্চ শাস্তি কত হবে তা আছে, সর্বনিম্ন শাস্তির উল্লেখ নেই।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ গতকাল বলেন, ডিএমপিতে ট্রাফিকের ২৩টি অঞ্চল রয়েছে। মামলা দেওয়ার বিষয়টি খুব সাবধানতার সঙ্গে করা হচ্ছে। প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে টিম গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই টিমগুলো মামলা দেওয়ার কাজ করছে। ধীরে ধীরে এই কার্যক্রম বাড়ানো হবে। মামলা দেওয়ার পজ মেশিনগুলো প্রস্তুত হয়ে গেলে পূর্ণাঙ্গভাবে মামলা দেওয়ার কাজ শুরু হবে।
নতুন আইনে পুলিশের এই মামলা দেওয়ার বিষয়টি নজরে আসে গত শনিবার দুপুরে। রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে উল্টো পথে আসা কয়েকটি মোটরসাইকেলকে ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের সদস্যরা মামলা দেন। জরিমানা করা হয় পাঁচ হাজার টাকা করে।
ট্রাফিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন আইনে মামলা ও জরিমানার বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যাতে জনসাধারণের কোনো ভুল-বোঝাবুঝি না হয়, সে জন্য তারা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছেন। কেউ যখন আইন লঙ্ঘন করছেন, তখন প্রথমত তাঁর ভিডিও চিত্র ধারণ করা হচ্ছে। এরপর তাঁকে থামিয়ে আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি জানানো হচ্ছে। তিনি কীভাবে আইন লঙ্ঘন করেছেন, সেটিও বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। এরপর সংশ্লিষ্ট ধারায় তাঁকে মামলা দেওয়া হচ্ছে। মূলত ট্রাফিক পুলিশের প্রতি যে একধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে, সেটি নিরসনেই এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে।
ডিএমপির ট্রাফিকের ২৩টি অঞ্চলের প্রতিটিতে একটি করে দল গঠন। প্রাথমিকভাবে এই দলগুলো মামলা দেওয়ার কাজ করছে। সাবধানতার সঙ্গে মামলা দেওয়া হচ্ছে।
ধীরে ধীরে মামলার কার্যক্রম বাড়ানো হবে।
ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. মনজুর মোর্শেদ বলেন, মামলা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যস্ত সময় এড়িয়ে চলছেন। রাস্তায় যান চলাচল যখন একটু কম থাকে, তখন মামলা দেওয়া হচ্ছে। মামলা দেওয়ার বিষয়টি এখনো সার্জেন্ট বা ট্রাফিক পরিদর্শকদের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। অন্তত একজন সহকারী কমিশনার ঘটনাস্থলে থাকছেন। তাঁর উপস্থিতিতে পুরো কার্যক্রম চলছে।
মনজুর মোর্শেদ জানান, বিজয় সরণি মোড়ে প্রথম দিন তাঁরা পাঁচটি মামলা দিয়েছেন। যারা উল্টো পথে চলাচল করেছে এবং যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, এমন মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ও পিকআপকে এই মামলা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মিরপুর, গাবতলী, পল্লবী ও শ্যামলীতে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যারা বাস স্টপেজ থাকা সত্ত্বেও মানছে না বা যেখান সেখান থেকে যাত্রী তুলছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
তবে শনিবার থেকে ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগ মামলা দেওয়া শুরু করলেও এই কার্যক্রম বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করেছে ডিএমপির ট্রাফিক পূর্ব বিভাগ। এই বিভাগের উপকমিশনার মইনুল হাসান গতকাল বলেন, গতকাল পর্যন্ত তাঁরা ১০ থেকে ১২টি মামলা দিয়েছেন। কার্যক্রম এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি।
ট্রাফিক উত্তর বিভাগেও গতকাল থেকে মামলা দেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই বিভাগের উপকমিশনার প্রবীর কুমার রায়। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। আর ট্রাফিক দক্ষিণের উপকমিশনার জয়দেব চৌধুরী জানান, তাঁদের বিভাগে মামলা দেওয়ার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। মামলা দেওয়ার বই তাঁরা বিভিন্ন পয়েন্টে পৌঁছে দিচ্ছেন। শিগগিরই মামলা দেওয়া শুরু হবে।
:প্রথম আলো