জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে ছয়দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস এই আদেশ দেন।দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে দুদক। দুদকের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। অপর দিকে সম্রাটের আইনজীবী শাহনাজ পারভীন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সম্রাটকে ছয় দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। এর আগে ১২ নভেম্বর সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
আরমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুদকের উপপরিচালক সালাউদ্দিন। আরমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
রাজধানীর অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে সম্রাট দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন। রাজনৈতিক পরিচয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধ জগতের অপ্রতিরোধ্য সম্রাট হয়েছিলেন তিনি। রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অফিস খুলে অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। একসময় ‘গডফাদারদের’ পক্ষে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-তদবির করলেও পরে রাজনৈতিক পর্যায়ে ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর আবার আলোচনায় আসে সম্রাটের নাম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক অঙ্গনের লোকেরা মনে করছিলেন, ঢাকায় ক্যাসিনো ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রকই হলেন সম্রাট। শুরুতে কয়েক দিন কাকরাইলে নিজের অফিসে থাকলেও পরে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তারের পর বন্য প্রাণীর চামড়া রাখার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। অস্ত্র ও মাদক রাখায় সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করা হয়। দুই মামলায় সম্রাটকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব।দুদকের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত সম্রাটের মাত্র ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার নথিপত্র পাওয়া গেছে।
সম্রাটের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি আরমান। ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির টাকার বড় অংশ আরমানের কাছে রাখতেন সম্রাট। ‘লাগেজ পার্টি’ থেকে যুবলীগ, ক্যাসিনো ও সিনেমার প্রযোজক হয়ে আরমান দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সব জায়গা।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে বিদেশ থেকে ‘লাগেজ পার্টির’ আনা ইলেকট্রনিক পণ্য বায়তুল মোকাররম এলাকার দোকানে দোকানে বিক্রি করতেন আরমান। পরে নিজেই লাগেজ পার্টির কারবারে যুক্ত হন। ২০১৩ সালে যুবলীগের পদ পেয়ে অল্প সময়ে গড়ে তোলেন বিত্তবৈভব। জুয়া-ক্যাসিনোর টাকায় নামেন সিনেমা প্রযোজনায়ও।
সম্রাটের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগের সুবাদেই ২০১৩ সালে যুবলীগের মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতির পদ পান আরমান। সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায় ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনো ও জুয়া-বাণিজ্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রকে পরিণত হন আরমান। তিনিই সম্রাটকে ক্যাসিনো ব্যবসায় আগ্রহী করেন বলে প্রচার আছে। সম্রাটের হয়ে পুরো ক্যাসিনো ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব পালন করতেন আরমান।
৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাটের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরমানও। গ্রেপ্তারের সময় মদ্যপ ছিলেন আরমান। তাঁর কাছে মাদকও পাওয়া যায়। সে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।