ভারতের মহারাষ্ট্রে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টায় সরকার গঠনের সময়সীমা শেষ হয়েছে। কিন্তু সেই সময়সীমা শেষের আগেই বিকালেই জারি করা হয় রাষ্ট্রপতি শাসন।
রাজ্যে সরকার গঠনের আর কোন সম্ভাবনা নেই-কেন্দ্রের কাছে এই রিপোর্ট পাঠিয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। রাজ্যপালের সেই সুপারিশে সিলমোহর দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। পরে সেই সুপারিশ পত্রে সই করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিলমোহরের পরই মহারাষ্ট্রে ৩৫৬ ধারা জারি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিধানসভার নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর টানা ১৯ দিন টানটান উত্তেজনার পর মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হল। কারণ গত ২১ অক্টোবর রাজ্যটির ২৮৮ টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়। ফল প্রকাশ হয় ২৪ অক্টোবর।
২৮৮ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য দরকার ১৪৫ জন বিধায়কের সমর্থন। সেখানে বিজেপি পায় ১০৫ টি আসন, শিবসেনা ৫৬ টি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) ৫৪ টি এবং কংগ্রেসের দখলে ছিল ৪৪ টি আসন। ফলে কোন একটি দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় প্রথম থেকেই সমস্যা তৈরি হয়। তবু বৃহত্তম দল হিসাবে প্রথমে বিজেপি-কে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানান রাজ্যপাল ভগৎ সিং।
কিন্তু সেক্ষেত্রে শরিক দল শিবসেনার সমর্থন নিয়ে সরকার গড়তে হোঁচট খায় বিজেপি। ৫০-৫০ ফর্মুলা দিয়ে বসে শিবসেনা। তাদের দাবি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর পাঁচ বছরের মেয়াদকালে প্রথম আড়াই বছর থাকবে শিবসেনার মুখ্যমন্ত্রী, পরের আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী হবেন বিজেপির কোন বিধায়ক। কিন্তু সেই ফর্মুলায় রাজি হয়নি বিজেপি। এরপর দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে শিবসেনাকে সরকার গঠনের আহ্বান জানায় রাজ্যপাল। শিবসেনার দাবি তাদের পিছনে এনসিপি ও কংগ্রেসের সমর্থন আছে। এই দুই দলের সমর্থনের চিঠি পেশ করার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় চায় শিবসেনা। কিন্তু রাজ্যপাল তা নাকচ করে দেওয়ায় ফের জটিলতা বাড়ে।
এরপর সোমবার রাতেই তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে এনসিপিকে সরকার গড়তে ডাকেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবারই রাত সাড়ে ৮ টার মধ্যে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলে। সেইমতো শিবসেনাও সমর্থন জোগাড়ে নেমে পড়ে। কথা বলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সাথে। একদিকে মহারাষ্ট্রে দলের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়াল। অন্যদিকে দিল্লিতে বৈঠক করেন সোনিয়াও।
কিন্তু এরই মধ্যে মহারাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন রাজ্যপাল। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপালের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সন্তোষ কুমার, ডেপুটি সেক্রেটারি রঞ্জিত কুমার সহ রাজভবনের কর্মকর্তারা।
এদিকে রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে শিবসেনা। তাদের প্রশ্ন সরকার গঠনর সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার আগে রাজ্যপাল কিভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন করতে পারে?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, আগামী ছয় মাসের জন্য মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল যদি সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিধায়কের সমর্থন জোগাড় করতে পারে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নেওয়া হতে পারে।